-->
শিরোনাম
দিরাইয়ের কালনী নদী

নৌকাঘাটে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
নৌকাঘাটে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি
ক্যাপশন: মাঝিদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাদাঁ আদায় করা হচ্ছে

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধলবাজারের পাশে কালনী নদীর পাড় থেকে মারকুলি ঘাট পর্যন্ত স্থানীয় দুয়েকজন প্রভাবশালী লোকজন একটি সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য ছোট ছোট ইজ্ঞিন চালিত ৪৬টি নৌকা হতে ইজারা বিহীন ৫ শত টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে নদী পারাপারের সময় কথা হয় ওই সমস্ত ছোট নৌকার একাধিক মাঝির সাথে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ১৫/১৬ বছর ধরে লীজ না নিয়েই স্থানীয় প্রভাবশালী ধল পশ্চিম আশ্রম গ্রামের মৃত কুবাদ উল্ল্যাহর ছেলে ও তাড়ল ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি সদস্য মো. বজলু মিয়া ও ধল চাঁনপুর গ্রামের মৃত লোকমান উল্ল্যাহ’র ছেলে কমরু মিয়াসহ আরো দুয়েকজন মিলে ওই ঘাটে প্রতিদিন নিয়মিত চাঁদা উত্তোলনের জন্য সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন স্থানীয় ধল চাঁনপুর গ্রামের মৃত দেবেন্দ্র রায়ের ছেলে বিকাশ রায়কে। তিনি সুপারভাইজার হিসেবে প্রতি ইজ্ঞিন চালিত ছোট নৌকা হতে ৫ শত টাকা হারে ৪৬টি নৌকা হতে প্রায় ২৩/২৪ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। সন্ধ্যায় ওই টাকাগুলো নিয়ে জমা দিচ্ছেন উক্ত দুই ব্যক্তির নিকট।

 

নৌকার মাঝি ও সুপারভাইজারের নিকট এই সংবাদকর্মী জানতে চান এই ঘাটটির সাথে কারা কারা জড়িত এবং তারা কি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন থেকে এই নৌকা ঘাটটি লীজ নিয়েছেন কিনা এবং প্রতিবছরের জন্য ঘাটটি কত টাকায় লীজ নেওয়া হয়েছে। তখন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ঘাট সুপারভাইজার বিকাশ রায়। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি গরীব মানুষ এই ঘাটটি বৈধ কি অবৈধ আমার জানার দরকার নাই। দিন শেষে আমার মুজুরীর দরকার।’

 

তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ১৫/১৬ বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ধল পশ্চিম আশ্রম গ্রামের মৃত কুবাদ উল্ল্যাহর ছেলে ও তাড়ল ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি সদস্য মো. বজলু মিয়া ও ধল চাঁনপুর গ্রামের মৃত লোকমান উল্ল্যাহর ছেলে কমরু মিয়াসহ আরো দুয়েকজন মিলে নৌকাগুলো হতে লক্ষাধিক টাকার মালিক বনে গেলেও এই অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের খবরটি নজরে আসেনি দিরাই উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিদের।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নৌকার মাঝি বলেন, এই ছোট ইজ্ঞিন চালিত নৌকায় ভোরবেলা থেকে শুরু করে সারাদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তেল জ্বালিয়ে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে স্থানীয় বজলু মিয়া ও কমরু মিয়াকে নিয়মিত ৫ শত টাকা করে চাঁদা দিয়ে আমাদের হাতে দু’চারশত টাকা থাকে। সেটা দিয়ে দিন শেষে চাল ডাল কিনে কোনভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে টানাপোড়ানের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুড়ায়।

 

এ ব্যাপারে স্থানীয় ধল পশ্চিম আশ্রম গ্রামের চাদাঁ উত্তোলনকারী তাড়ল ইউপি সদস্য মো. বজলু মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে এই ঘাট হতে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, গত ১৫/১৬ বছর ধরে আমি, এবং কমরু মিয়া এখানে দুটি ঘাটের ম্যানেজার হিসেবে একটি সমিতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছি। তবে কোন সমিতির মাধ্যমে এবং এই ঘাটগুলো সরকার থেকে লীজ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কোন সঠিক জবাব দিতে পারেননি। পরে মোবাইল ফোনের লাইনটি কেটে দেন।

 

এদিকে আরেক চাঁদা উত্তোলনকারী কমরু মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

এ ব্যাপারে তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আহমদ বলেন, নিয়ম হলো এই ধলবাজার খেয়াঘাটটি আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা নেওয়ার কথা। কিন্তু যারা টোলের নামে টাকা উত্তোলন করছেন এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।

 

এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা কমিশনার (ভূমি) জনি রায় বলেন, এই নৌকা ঘাটটি সম্ভবত দিরাই উপজেলা পরিষদ অথবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে টোল আদায় করার কথা। যদি ইজারা বন্দোবস্ত নেওয়া না হয় তাহলে সেটা অবৈধ। যারা এটার সাথে সম্পৃত্ত তদন্ত করে প্রমানিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ ব্যাপারে দিরাই ইউএনও মাহমুদুর রহমান খন্দকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে ও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version