শুষ্ক মৌসুমে বছর বছর কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নামছে। ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদায় বাড়ে লবণাক্ততা। সুপেয় পানির অভাবে ভুগতে হয় চট্টগ্রাম শহরবাসীকে। লবণাক্ততার স্থায়ী সমাধান মিলবে নতুন ইনটেক স্টেশন নির্মাণ হলে। আপাতত নিরূপায় চট্টগ্রাম ওয়াসা বৃষ্টির অপেক্ষাতেই। নতুন ইনটেক স্টেশন নির্মাণের একটি প্রস্তাবিত প্রকল্প বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইনটেক স্টেশন এমন একটি অবকাঠামো যা নদী বা হ্রদের মতো উৎস থেকে নিরাপদ পানি তুলে নিয়ে তা পানি শোধনাগার বা বিতরণ ব্যবস্থায় পৌঁছে দেয়। এদিকে লবণাক্ততার কারণে পানি সংকটে পড়ে টানা ৯ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওয়াসার পানির ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ভারি বৃষ্টি না হলে সমস্যা সহসা মিটবে না বলে মনে করছে ওয়াসা। তাই আপাতত বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। যদিও চলতি মার্চ মাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে না চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জানা গেছে, গত এক মাসের মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমেছে প্রায় ১০ ফুট। যেখানে পানির স্বাভাবিক সময়ের পানির উচ্চতা থাকে ৯০ ফুটেরও বেশি। ফলে বর্তমানে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫টি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট চালু থাকায় সাগরের লবণাক্ত নদীতে পানি ঢুকে যাচ্ছে জোয়ারের সময়।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে হালদার ও কর্ণফুলীর পানিতে অতিরিক্ত লবণ থাকায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। তাই ব্যাহত হচ্ছে পানি পরিশোধন কার্যক্রম। প্রতি লিটার পানিতে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে ওয়াসার ল্যাবরেটরির পরীক্ষায়। ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার রাঙ্গুনিয়া, মদুনাঘাট ও মোহরা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পানি উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে রেশনিংয়ের মাধ্যমে নগরে পানি সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছে ওয়াসা। পানি উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে নগরের পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী, আগ্রাবাদ, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, দেওয়ান বাজার, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ওয়াসার পানি পাচ্ছেন না। দিনে পানি থাকলেও রাতে পানির অভাবে রমজান মাসের শুরুতে সেহেরির সময় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক।
উত্তর কাট্টলী এলাকার ওয়াসার একজন গ্রাহক বলেন, ওয়াসার লাইনের উপর নির্ভরতার ফলে তীব্র পানির সংক দেখা দিয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রমজানের প্রথম দিনে পানি না আসায় এলাকার মানুষ হয়েছে চরম ভোগান্তির শিকার।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি কমে যাওয়ার ফলে সুমদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে যায় নদীতে। ফলে লবণাক্ত পানি হালদায় ঢুকে যাচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত লবণাক্তের সমস্যা কমার কোনো সুযোগ এখনো পর্যন্ত নেই।’ গত বছরের মার্চ মাসের মতো এবারও কাপ্তাই লেকের পানিতে শ্যাওলা জমে যাওয়ার আশংকা করে তিনি বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসের শুরুতে পানির মধ্যে শ্যাওলা জমে গিয়েছিল। ফলে ফিল্টারে শ্যাওলা জমে যাওয়ার কারণে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বন্ধ রাখতে হয়েছে। মূলত লেকের পানিতে মানববর্জ্য বেড়ে যাওয়ায় শ্যাওলা জন্মানোর পরিমাণ বাড়ছে।’ কাপ্তাই লেক ঘিরে বিভিন্ন কটেজ বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল্লাহ বলেন, হালদা নদী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ও ভান্ডালজুরি প্রকল্পের আগে একটি নতুন ইনটেক স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা করছি। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইনটেক স্টেশন নির্মাণ হলে পানির লবণাক্তের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য