-->
শিরোনাম
২ শতাধিক পরিবার অন্ধকারে

রাজাপুরে ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
রাজাপুরে ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক
ট্রান্সফর্মারের তামার কয়েল চুরি হয়েছে

ঝালকাঠির রাজাপুরে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক পড়েছে। এ উপজেলায় চলতি মাসের গত ২ সপ্তাহে ৬টি সহ গত আড়াই মাসে ১১টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়ায় বর্তমানে ৪টি স্থানের ট্রান্সফর্মার না থাকায় ২ শতাধিক পরিবার অন্ধকারে রয়েছেন। চুরি হওয়া স্থানে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে গ্রাহকদের টাকায় নতুন ট্রান্সফর্মার কিনতে হচ্ছে।

 

গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ থাকাকালীন ও লোডশেডিংয়ের সময় ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে, যা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে চুরি করা সম্ভব নয়, এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারিরা জড়িত রয়েছে।

 

উপজেলার মধ্য চাড়াখালী গ্রামের আল আমিন জানান, কয়েকদিন আগে মধ্য চাড়াখালী ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত ৩৫ পরিবার বিপাকে পড়েছে।

 

নিমহাওলা এলাকার জাহিদ ও হিরন খান জানান, গালুয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খায়রে হাট নিমহাওলা এলাকার ১০ কেবি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে ওই এলাকার ১৫ পরিবারেরও বেশি পরিবার অন্ধকারে রয়েছে।

 

ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ইসা আকন পলাশ জানান, ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ৫ কেবি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে ১৫ পরিবার দুর্ভোগে রয়েছে।

 

বদনিকাঠি গ্রামের মুন্না জানান, বদনিকাঠি খান বাড়ির ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে অনেক পরিবার অন্ধকারে রয়েছে।

 

সত্যনগর তুলাতলা এলাকার আখি ও লিজা জানান, সত্যনগর তুলাতলা এলাকার সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে অন্তত ৭৫ পরিবার কয়েকদিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে থাকলেও নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হচ্ছে না। এখনও গ্রাহকরে টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনতে হবে বলে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জানিয়েছে।

 

বাগড়ি বাশতলা গ্রামের রিংকু সিকদার, নাদিম, আলিম ও আলম জানান, বাগরি বাশতলা গ্রামের ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে যায় পরে ৪৫ জন গ্রাহকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনে স্থাপন করতে হয়েছে। এতে প্রায় ১ সপ্তাহ অন্ধাকারে থাকতে হয়েছে সবাইকে। লাইন চালু থাকাকালীন সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফর্মার চুরি করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারিরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।

 

গ্রাহকদের আরো অভিযোগ, ট্রান্সফর্মার চুরি হলে পল্লী বিদ্যুতের অফিস থেকে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে হয়। ‘নতুন ট্রান্সফর্মার বিক্রির একটি কৌশল হলো ট্রান্সফর্মার চুরি’ বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের। এছাড়াও উপজেলার বড়ইয়া পালট, চুনপরি ও সাতুরিয়া ইউনিয়নে ট্রান্সফর্মার চুরির খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ স্থানের ট্রান্সফর্মারের ভেতরের তামার কয়েল নেয় চোরেরা।

 

গ্রাহকরা জানান, কিছুদিন পর পর একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটেইে চলছে। কিন্তু প্রতিরোধে বা চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কোন মাথাব্যাথা নেই। চোরের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অসহায় হয়ে পড়েছে। তাতে অনেক দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফ্রিজের মাছ, মাংস সহ বিভিন্ন পণ্যের ক্ষতি হয় চরমভাবে। এ ছাড়াও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় চরম বিঘ্ন ঘটে।

 

সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ঝালকাঠির রাজাপুরের ট্রান্সফর্মার চুরির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। উপজেলার পশ্চিম ফুলহার ও বড় কৈবর্তখালী থেকে তাদের আটক করা হয়।

 

আটককৃতরা হলেন, উপজেলার পশ্চিম ফুলহার গ্রামের মৃত আয়েন আলী খানের ছেলে দলিল উদ্দিন ওরফে ধলু ও বড় কৈবর্তখালী গ্রামের হানিফ ঘড়ামীর ছেলে ইসা ঘড়ামী।

 

রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকটি ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের দুজনকে আটক করে এবং ট্রান্সফর্মারের ১৩ কেজি তামার তার উদ্ধার করে। আটকৃতদের বিরুদ্ধে রাজাপুর পল্লী বিদ্যুতের এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসূদন রায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩টি ও চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত ৬টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার, ২৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ১ লাখ টাকা, ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৭৯ হাজার টাকা, ১০ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ও ৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

 

পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িতের অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসূন রায় বলেন, বর্তমানে ৪ টি স্থানের ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ার পর নতুন করে স্থাপন করা হয়নি। এতে অন্তত দেড় থেকে ২শ’ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছে। চুরি হওয়া স্থানে প্রথমবার গ্রাহকদের অর্ধেক ও দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়, এটা কষ্টের বিষয়। চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও চুরি ঠেকাতে মাইকিং করা হবে। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও জরুরি। পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগীতা চাওয়া হবে।

 

মুঠোফোনে রাজাপুর থানার ওসি মু. আতাউর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ট্রান্সফর্মার চুরির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারে নিয়ে সমন্বিত উদযোগের মাধ্যমে চোরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version