সীতাকুণ্ডে মুক্ত জলাশয় বা বিলের বাহারি জাতের দেশীয় মাছ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন-শিল্পায়ন, জলাশয় ভরাটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র। জলবায়ুর বৈরী পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কৃষিতে অধিক ফলনের আশায় মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ উজাড় হচ্ছে রেনু পোনা। এতে স্থানীয় হাটবাজারে খুব কমই মিলছে চিরচেনা দেশীয় সুস্বাদু মাছ। বাজারে হঠাৎ দেশীয় মাছ দেখা গেলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই স্বল্প।
সরেজমিনে উপজেলার বড় দারোগারহাট থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে কৈ, শিং, মাগুর, বোয়াল, পাবদা, টেংরা, সরপুটি, টাকি, চিতল, আইর, শোল, বাইম ও মলার মতো সুস্বাদু দেশীয় মাছ আগের মতো আর চোখে পড়ে না। সামুদ্রিক বা পুকুরে চাষ করা হাইব্রিড জাতের মাছে সয়লাব হাট-বাজার। যে সব পুকুরে এক সময় দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ হতো সে সব পুকুর এখন বিভিন্ন হাইব্রিড মাছের দখলে। ফলে মিঠা পানির দেশীয় মাছের স্থান দখল করছে পুকুরে উৎপাদিত হাইব্রিড মাছ।
হাইব্রিড মাছ চাষে অধিকাংশ পুকুরে প্রয়োগ করা হচ্ছে বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত খাদ্য। তাতে এক দিকে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে পুকুরগুলোর পানি, স্বাদে হারিয়ে যাচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্য ও জৌলুস।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর উদ্দিন রাশেদ জানান, বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত খাদ্য গ্রহনে উৎপাদিত মাছগুলো একদিকে স্বাদহীন অপর দিকে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি। খাদ্য তালিকায় থাকা এসব মাছে রয়েছে ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকিও।
পৌরমেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউর আলম বলেন, এক সময় উঁচু জমিতে ফসল আবাদ আর নিচু জমিতে হতো মাছ চাষ। শুষ্ক মৌসুমে নিচু জমিতে জমানো পানি উঁচু জমির কৃষি কাজে ব্যবহৃত হতো। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়ছে মাছ চাষের উপর। ফলে মুক্ত জলাশয়ে আর মিলছে না সুস্বাদু দেশীয় মাছের দেখা।
সীতাকুণ্ড সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, পুকুরগুলো আজ হাইব্রিড মাষ চাষীদের দখলে তাতে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির নিরীহ পাখি ডাহুক, হুমকিতে সুস্বাদু দেশীয় প্রজাতির মাছের জীবনচক্র।সীতাকুণ্ড রূপালী মাছের আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী লিয়াকত আলী বলেন, দেশীয় মাছের প্রচুর চাহিদা থাকলেও প্রতিনিয়ত কমছে উৎপাদন। বাজারে এখন দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল চলছে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু মাছ পুকুরে চাষ হয়। তবে পরিমাণ খুবই স্বল্প, দামে বেশী। অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়ন ও জলাশয় ভরাটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র। যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে। উপজেলা মৎস্য অফিস দেশীয় সুস্বাদু মাছ সংরক্ষণে চাষীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।
ভোরের আকাশ/মিইইই
মন্তব্য