চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া সড়ক সংলগ্ন খালের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা তৈরি করায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে কৃষিকাজের জন্য লিজ নিয়ে সেই জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। এ কারণে প্রায় ১ কিলোমিটার খাল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চার গ্রামের কৃষক। তাদের জমিতে পানি জমে থাকায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, খালে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের সম্পত্তি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আনার ডেটাবেজ তৈরি হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে শাহরাস্তি পৌরসভার কালিপাড়া আঞ্চলিক সড়ক থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে খালের ওপর দেখা গেল বিভিন্ন স্থাপনা। কালিয়াপাড়া-রহিমানগর এই সড়কের দুই পাশে জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়ে তৈরি করা হয় এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে খালের ওপর পাকা স্থাপনা করার জন্য লিজের কাগজপত্রে উল্লেখ না থাকলেও এটি করছেন অনেক। যার ফলে খালের অস্তিত্ব অনেকটাই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, সড়কের পাশে জেলা পরিষদ লিজ দেয় কৃষি। কিন্তু লোকজন এরপর তৈরি করে স্থাপনা। বিশেষ করে খালের মুখ বন্ধ করে দেও হয় অনেক সময়। যারা স্থাপনা তৈরি করেন তাদের অনেকেই প্রভাবশালী।
কৃষক আনোয়ার উল্লাহ ও বাকের মিয়া বলেন, এই খালের বিভিন্ন স্থানে মুখ বন্ধ থাকায় এবং বেশ কয়েকটি কালভার্ট তৈরি করায় প্রতিবছর বোরো মৌসুমে ধান আবাদ করা সম্ভব হয় না। কারণ জমিতে পানি জমে থাকে। এলাকার কালিয়াপাড়া, দেবিপুর, নয়ানগর ও বানিয়াচোঁ গ্রামের মাঠের শত শত কৃষকের জমি এই সময়ে অনাবাদি পড়ে থাকে। তাদের প্রশ্ন-জেলা পরিষদ কেন এভাবে লিজ দেয় আবার তদারকিও করে না।আনোয়ার উল্লাহ আরও জানান, তারা এই খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের সমস্যায় কেউ এগিয়ে আসেন না। তারা ফসলি জমিগুলো রক্ষা করতে জেলা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল বলেন, এই খালটি সংযুক্ত হচ্ছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের পাশে। সেখানে যেসব ব্রিজ ও কালভার্ট আছে সেগুলোর নিচে পরিষ্কার করে দিতে হবে। জেলা পরিষদ কিংবা স্থানীয়ভাবে কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় এখন এই খালের অস্তিত্ব নেই।
কালিয়াপাড়া গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী সফিউল হক শিশির বলেন, কালিয়াপাড়া চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের পাশে অনেক স্থানে চলাচলের রাস্তা ও কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। এক কিলোমিটার খাল যদি পরিষ্কার রাখা হয়, তাহলে এই চার গ্রামের শত শত কৃষক অনেক উপকৃত হবে। পানি আর আটকে থাকবে না এবং নির্দিষ্ট সময়ে ফসলের আবাদ হবে। জনদুর্ভোগ রক্ষায় খালটি পরিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদপুর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মারুফ হোসেন বলেন, সড়কের পাশে বোরো পিট (খাল) কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। কৃষিকাজ ব্যাহত হয় এমন অভিযোগ এলে সড়ক বিভাগ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদের যেসব সম্পত্তি আছে, সেসব সম্পত্তি আমরা ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকার আলোকে লিজ দিয়ে থাকি। জেলা পরিষদের সম্পত্তির কোনো ডেটাবেজ ছিল না। সম্প্রতি আমরা ৪৩৫ একর সম্পত্তির ডেটাবেজ তৈরি করেছি। যেগুলো আমাদের খাল ও পুকুর শ্রেণির। আপাতত আমরা এসব সম্পত্তি লিজের আওতার বাইরে রেখেছি। চলতি বছর কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি।তিনি আরও বলেন, যারা শর্ত ভঙ্গ করে লিজের সম্পত্তিতে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্ছেদ মামলা রুজু করছি। এটি চলমান। একই সঙ্গে আমাদের ডেটাবেজের কাজ সম্পন্ন হলে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য