ঈদকে সামনে রেখে কর্মেব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লীর শ্রমিক ও মালিকেরা। তবে বিদ্যুৎ, রং ও সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধির কারণে চিন্তিত তাঁত মালিকেরা।
দিনরাত তাঁতের খট খট শব্দ জানান দিচ্ছে, এ শিল্প মন্দা কাটিয়ে কিছুটা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বাজারে কাপড়ের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দাম অনেক বেড়েছে। গত দুই বছর আগের সময়ের চেয়ে এখন বেশি দামে কাপড় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এই মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ বিদ্যুৎ, রঙ-সুতাসহ তাঁত উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন তাঁত ব্যবসায়ের সাথে জড়িত মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে বেলকুচি,এনায়েতপুর,শাহজাদপুর উল্লাপাড়াসহ ৭টি উপজেলায় বিভিন্ন তাঁত ফ্যাক্টরি গুলোতে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের আধুনিক রুচিশীল কাপড়সহ ঈদ পোশাক। জামদানি, সুতি জামদানি, সুতি কাতান, চোষা, বেনারসি, শেড শাড়ি, লুঙ্গিসহ নানা ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে এখানে। শাড়ির ওপরে বর্ণিল সুতা, বাক ও চুমকিরও কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া কাপড়ের ওপর প্রিন্ট রংতুলি দিয়ে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশাও দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন নকশার তৈরি কাপড়ের চাহিদা এখন দেশ ছাড়িয়ে এর সুনামের সাথে ছড়িয়ে পড়েছে ভারত, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
সরেজমিনে গিয়ে ঘুড়ে দেখা যায়, পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও এনায়েতপুরে শাড়ি, লুঙ্গী ও থ্রি পিচ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকেরা। বসে নেই নারীরাও। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নলীতে সুতাভরা, সুতাপারি করা, মাড়দেয়া ও রঙ তুলিতে নকশা আঁকাসহ কাপড় বুননের কাজেও সহযোগিতা করছে ওই এলাকার নারী শ্রমিকরা।
ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁত কারখানার মালিকেরা। কাপড়ের উৎপাদন বাড়াতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তাঁত শ্রমিকেরা। কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের কোলাহলে সরব হয়ে উঠেছে বেলকুচি,এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, উল্লাপাড়ার তাঁতপল্লী।
রেজাউল, মোতালেব, হাকিম, জালাল হোসেনসহ একাধিক তাঁত শ্রমিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। আগে দিনে ৭-৮ ঘন্টা কাজ করলেও এখন ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করছেন। এতে তাদের আয়ও বেড়েছে। ঈদে নিজের ও পরিবারের চাহিদাকে ঘিরে বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে মূলত অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাদের কাজের সমস্যা হলেও তা মানিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত আয়ের উদ্দেশ্যে তাঁত কারখায় শ্রম দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
তাঁত শ্রমিক আব্দুল লতিফ ভোরের আকাশকে বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে তাই দিনরাত পরিশ্রম করছি। কাজ করে সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পায়। বাজারে কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। সামনে ঈদ পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়তি রোজগারের আশায় রাত-দিন কাজ করছি।
সোয়ান লুঙ্গীর স্বত্বাধিকারি বাবু সরকার ভোরের আকাশকে বলেন, সারা বছর যেমন তেমন আমরা তাঁতের ব্যবসায়ী রয়েছি তারা ঈদ ও পূজাকে ঘিরে আশায় থাকি ভালো ব্যবসা হবে। সেই অনুপাতে তাঁতিরা কাপড় উৎপাদন করে থাকে। এবছরও তারই ধারাবাহিকতায় আশা রাখছি যে ঈদে ভালো একটা ব্যবসা হবে। আমরা কিছুটুকুও হলেও লাভের মুখ দেখবো। তবে এখনো ভালো কিছু বুঝতেছি না। সামনে আরো দিন রয়েছে দেখা যাক কি হয়। আশা করি কেনা বেচা ভালোই হবে।
জ্যোতি শাড়ি ঘরের স্বত্বাধিকারী বৈদ্য নাথ রায় ভোরের আকাশকে বলেন, রোজার বেশ কয়েকটা চলে গেলেও এখনো কাপড়ের বাজার খুব একটা সন্তোষ জনক না। তবে সামনে আরো কয়েকদিন রয়েছে। আশা করছি ঈদকে ঘিরে আমরা যে আশায় বুক বেঁধেছিলাম তা পূর্ণ হবে।
সিরাজগঞ্জ হ্যান্ডলুম এন্ড পাওয়ারলুম অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মো.বদিউজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, দেশে বিদ্যুৎ, রং ও সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধির কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছে তাঁত মালিকেরা। তাঁত শিল্পকে বাঁচানোর জন্য যদি ইতোমধ্যে সরকার তাঁত ব্যাংক চালু না করে, সল্প সুদে লোন তাঁতীদের না দেয় তাহরে দেখা যাবে যে এই তাঁত শিল্প একদিন বন্ধ হয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্প অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত রয়েছে। তাই এই তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে চাইলে বিদ্যুৎ, রং, সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম কমাতে হবে। এবং তাঁতিদের সল্পসুদে ঋণ দেওয়া ও ভর্তুকি দিয়ে সরকারকে তাঁতশিল্পের দিকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে এই তাঁতশিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য