-->

পারকি সৈকত ঘিরে বাস্তবায়ন হচ্ছে ৭১ কোটি টাকার প্রকল্প

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
পারকি সৈকত ঘিরে বাস্তবায়ন হচ্ছে ৭১ কোটি টাকার প্রকল্প
ক্যাপশন: পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলছে

দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের একমাত্র আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স। আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতের তীরঘেঁষে গড়ে তোলা এ পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ চলতি বছরের যেকোন সময় শেষ হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যটন কমপ্লেক্স বাস্তবায়ন শেষে আধুনিক সব সুবিধা পাবেন সৈকতে ভ্রমণপিপাসুরা। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহর থেকে সৈকত এলাকায় যেতে সময় লাগছে মাত্র ১৫ মিনিট। এতে সৈকত ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য আর কর্মসংস্থান। স্থানীয়দেরও ভাগ্য বদল হবে সরকারের মেগা এ প্রকল্পের মাধ্যমে, এমনই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে কাজের অগ্রগতি দেখতে পারকি ভিজিট করে গেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি।

 

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ পর্যটন করর্পোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অসীম শীল বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

 

‘চট্টগ্রামে একমাত্র ট্যুরিস্ট হোটেল হচ্ছে আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতে। চট্টগ্রামসহ নানা স্থানে হোটেল থাকলেও পর্যটন কমপ্লেক্সটি শুধু পর্যটন নির্ভর ও পর্যটন আকর্ষণ করার জন্য। প্রকল্পটি শেষ হলে এটি পর্যটনশিল্পে বড় অবদান রাখবে।

 

পারকি সমুদ্রসৈকতে প্রবেশমুখের পাশেই পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাদেশ পর্যটন করর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৩.৩৬ একর জমিতে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের এ পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৬২ কোটি টাকা। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতাধীন ১০টি সিঙ্গেল কটেজের সিভিল ওয়ার্ক, চারটি ডাবল ডুপ্লেক্স কটেজের ফাউন্ডেশন, সার্ভিস বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে।

 

কৃত্রিম লেকও তৈরি হয়ে গেছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে কার পার্কিং, পিকনিক শেড নির্মাণের কাজ। কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার দুটি বার চলতি বছরে যে কোনো সময়ে টেন্ডার হতে পারে।

 

আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স প্রকল্পের মধ্যে মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ডাবল ডুপ্লেক্স কটেজ ও ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। চতুর্থ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন। এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে পর্যটন অফিস, দ্বিতীয় তলায় দুটি দোকান, একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকবে দুটি বার, একটি ২৫০ আসনের কনভেনশন হল। তৃতীয় তলাবিশিষ্ট একটি সার্ভিস ব্লক, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য সিঙ্গেল ব্যাচেলর সার্ভিস রুম ৩৫টি, কমপ্লেক্স সার্ভিস স্টাফদের জন্য ৪৪টি রুম রয়েছে। এ ছাড়া একটি লেক, দুটি পিকনিক শেড, কুকিং শেড, একটি খেলার মাঠ, যার মধ্যে সব ধরনের খেলার ব্যবস্থা থাকবে।

 

আনোয়ারা-কর্ণফুলীর সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর প্রস্তাবে চট্টগ্রামের একটি জনসভায় পারকি সমুদ্রসৈকতকে আধুনিক পর্যটন শিল্প এলাকা গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী পারকি সৈকতে শুরু হয়েছে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ। আনোয়ারার এ সমুদ্রসৈকত দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। তবে টানেলের আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। এ কারণে টানেল চালু হয়েছে বলে সহজে পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন। পারকি সৈকতে শুক্রবার বন্ধের দিন ও সরকারি নানা বন্ধের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

 

বিশেষ করে উত্তাল সাগরের ঢেউ, বর্হিনোঙরে সারি সারি জাহাজ, সৈকতের এক পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে বড় আকৃতির ঝাউবাগান দেখতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের আগমন দিন দিন বাড়ছে। আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রতিদিন সমুদ্রসৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version