ময়মনসিংহের বিভাগীয় জেলা শহরে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ঐতিহ্য নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ‘বড় মসজিদ’। এই মসজিদ ময়মনসিংহ বিভাগের কেন্দ্রীয় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। ময়মনসিংহের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লেখা বিভিন্ন গ্রন্থে বড় মসজিদের কথা উল্লেখ করা আছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। ঈদ ও জুমায় অসংখ্য মানুষ বাস-ট্রেনে চড়ে, হেঁটে বহুদূর থেকে নামাজ পড়তে আসেন বড় মসজিদে।
ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোতোয়ালি মডেল থানার পাশে চকবাজার নামক স্থানে আনুমানিক পৌনে ২০০ বছর আগে (১৮৫০/১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ) গণ্যমান্য মুসলমানরা নামাজ আদায়ের জন্য টিনের ছাপরা দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদটিই এখন বৃহত্তর ময়মনসিংহের গর্ব ও ঐতিহ্যের স্মারক।
১৯৩৫ সালের বেঙ্গল ওয়াকফ অ্যাক্টের অধীনে মসজিদটি পাবলিক এস্টেটে পরিণত হয়। প্রায় শূন্য এক দশমিক ৯ একর জমির ওপর নির্মিত তিনতলার সুরম্য স্থাপত্য বড় মসজিদ। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট ও প্রস্থ ৮৫ ফুট। অন্তত পাঁচ হাজার মুসুল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে অপূর্ব অলংকরণে সুশোভিত মসজিদের ১২৫ ফুট উঁচু দুইটি মিনার ও একটি কেন্দ্রীয় সুবৃহৎ গম্বুজে ব্যবহৃত হয়েছে চীনামাটির তৈজসপত্রের টুকরো দিয়ে তৈরি নান্দনিক নকশাকৃত আস্তরণ।
মসজিদের পশ্চিম দিকে রয়েছে দুইটি অনুচ্চ ফাঁপা গম্বুজ। ছাদের রেলিং দেওয়া হয়েছে মিনার-গম্বুজের আদলে ঢেউ খেলানো শোভায়। মসজিদের প্রধান তিনটি প্রবেশমুখেও আছে অনুচ্চ গম্বুজ শোভিত ফটক। মসজিদের প্রবেশমুখেই, জলকেলিরত মাছের শোভামণ্ডিত স্বচ্ছ-পবিত্র পানির দুইটি হাউস ও আলাদা অজুখানা।
মসজিদের অভ্যন্তরে মূল্যবান মোজাইক পাথরের মেঝে, দেয়ালজুড়ে শ্বেতশুভ্র মনোরম টাইলস, সুদৃশ্য ঝাড়বাতি, অত্যাধুনিক শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও তাপানুকূল ব্যবস্থা। খ্যাতনামা আলেম-উলামায়ের দ্বীনি এই মসজিদে নামাজ আদায় করে মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন মুসল্লিরা।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিশর থেকে আগত প্রখ্যাত কারি ও আলেম মাওলানা আবদুল আওয়াল (রহ.) ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১ থেকে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা ৫৬ বছর হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ)-এর খলিফা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, জামানার কুতুব হজরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.) ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ মহান আধ্যাত্মিক সাধকের পবিত্র ফায়েজ, খেদমত ও মেহনতে ‘বড় মসজিদে’র দ্যুতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে আল্লামা শায়খ আবদুল হক অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। বড় মসজিদের পাশে মসজিদকেন্দ্রিক একটি মাদরাসা গড়ে তোলা হয়েছে।
জামাল হোসেন নামের একজন মুসল্লী বলেন, প্রতিদিন অনেকেই এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। আমারও এখানে নামাজ আদায় করলে ভালো লাগে।
আব্দুল হাই নামের আরেকজন বলেন, এটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। পবিত্র জুম্মার নামাজে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এখানে সবচেয়ে বেশী মুসল্লীর সমাগম ঘটে। অনেক মানুষ একত্রে নামাজ আদায় করে মনে দারুণ প্রশান্তি পাওয়া যায়।
জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.) বড় মসজিদ, মোমেনশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি সারোয়ার হোসাইন বলেন, এটি দীর্ঘদিনের পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ। এখানে দূরদূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসেন। এই মসজিদের সঙ্গে অনেক বুজুর্গানে দ্বীনদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেই হিসেবেও মানুষের এই মসজিদের প্রতি একটা বাড়তি মোহাব্বত ও আলাদা আকর্ষণ রয়েছে।
তিনি বলেন, তিনতলা বিশিষ্ট এই মসজিদে একসঙ্গে ৬ থেকে ৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ঈদ ও বিশেষ রজনীগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রেও এই মসজিদের ভূমিকা অনেক। সেইসঙ্গে মসজিদের কূলঘেঁষে থাকা মাদরাসাও সুনাম-সুখ্যাতি অক্ষুণ্ন রেখেছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য