-->
শিরোনাম
ঈদ বাজার

ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম বিক্রেতারা

বরিশাল প্রতিনিধি
ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম বিক্রেতারা
শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়

বরিশাল আসন্ন ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে বরিশাল নগরীর ঈদ বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। এতে করে বিক্রেতারাও বেশ খুশি। একইসাথে নগরীর পোশাক তৈরীর টেইলার্সগুলো শুরু করে দিয়েছে পোশাক তৈরীর অর্ডার নেওয়া। সবমিলিয়ে ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।

 

১৫ রমজানের পর থেকেই ক্রেতা আকর্ষণে নানা সাজসজ্জা আর বিভিন্ন প্রকার প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীর খুচরা ও পাইকারী পোশাক বিক্রেতারা। ছোট-বড় মার্কেট, স্বনামধন্য বিদেশী শোরুম ও শপিংমলগুলোর ভেতরে পোশাকের সমাহার আর বাহিরে রং-বেরংয়ের বাতিতে ঝলমল করছে সর্বত্র। উৎফুল্ল ক্রেতাদের জমজমাট কেনাকাটায় জমে উঠেছে মার্কেটগুলো। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নিত্য নতুন কালেকশন নিয়ে পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউজ ও মার্কেটগুলো।

 

ঈদের পোশাক ক্রয় করতে নগরীর চকবাজারে আসা বিএম কলেজের ছাত্রী জেসিকা আহম্মেদ জুঁই, গৃহীনি মমতাজ বেগম, ফেরদৌস জাহান আঁখি বলেন, এ বছর রোজা শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বেশ কয়েকবার নগরীর একাধিক মার্কেটঘুরে ঈদের শপিং করেছি। কিন্তু চলতি বছর ঈদের সব জিনিসপত্র ও পোশাকের দাম গতবারের চেয়ে তিন থেকে চারগুন বেশি।

 

নগরীর চকবাজার এলাকার স্বদেশী বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধীকারি মৃনাল কান্তি সাহা বলেন, ক্রেতারা নিত্য-নতুন ডিজাইনের পোশাক ও শাড়ি কিনছেন। নগরীর চকবাজার, ভেনাস মার্কেট, সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, সোবাহান কমপ্লেক্স, ফকির কমপ্লেক্স, শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও সিটি মার্কেট ও মহসিন মার্কেটে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের ক্রেতাদের ভিড় ছিলো লক্ষণীয়। এ বছর ঈদকে ঘিরে নগরীর মার্কেটগুলোতে বিদেশী পোশাকের সাথে সাথে দেশী পোশাকের সমারহ রয়েছে বেশ। ঈদ মার্কেটে পুরুষের কাছে পাঞ্জাবীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

 

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, ঈদ বাজারে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিছিদ্র নিরাপত্তা দিতে ও যানজটমুক্ত রাখতে মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ইতোমধ্যে পুরো নগরীজুড়ে ২৬০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা নগরীকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা, উন্নত পুলিশি সেবার লক্ষে ক্রাইম কন্ট্রোল, ট্রাফিক ও থানা কন্ট্রোল এবং সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের জন্য ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের মাধ্যমে বিভাগীয় শহর বরিশালের পুরো নগরী এখন পুলিশি নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যেকারণে মধ্যরাতেও নিরাপত্তায় নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলগুলোকে নিবিঘ্নে ঈদের বিকিনিকি চলছে। পাশাপাশি ক্রেতাদের চাপ সামলাতে ইতোমধ্যে নগরীর চকবাজার ও গীর্জা মহল্লা এলাকার সড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

 

এবার ঈদ মার্কেটে মেয়েদের বাহারি পোশাক, শাড়ি, থ্রি-পিস ও পুরুষের শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক কিনতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করছেন সবাই। দেশি পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি পণ্যও কিনতে ঝুকছেন ক্রেতারা। দোকানীরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে নারীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ সুতি শাড়ি। পাশাপাশি রয়েছে তাঁত-জামদানি, মুসলিম জামদানি ও দোপাট্টা। যা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। মিরপুরী কাতান, সিল্ক ও জুট কাতানেরও চাহিদা রয়েছে। যা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে।

 

মেয়েদের থ্রি-পিসে এবার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পি-কে, কাল্পনিক, লাভ স্টোরি নামের নতুন ডিজাইনের থ্রি-পিসের যথেষ্ট চাহিদা বরিশালের ঈদ বাজারে। এসব থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছেলেদের জন্য সুতি পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানি বেশি বিক্রি হচ্ছে। যার দাম ৩ হাজার ২শ’ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঈদের কেনাকাটার জন্য প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে, রীচম্যান-লুবনান, স্মার্টটেক্স, স্বপ্ন, স্টার প্লাস, ব্যাঙ, চন্দ্রবিন্দু, বিশ্ব রঙ, আড়ংসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের পোশাকের দোকানগুলোতে।

 

বরিশাল নগরীর চক বাজার বিপণীন বিতানগুলোতে দেশীয় শাড়ি ক্রয় করতে আসা গৃহিনী সীমা আহম্মেদ বলেন, বাঙালীর যেকোন উৎসবে নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি ও থ্রি-পিস। ঈদে নারীদের জন্য শাড়ি আর পুুরুষের জন্য পাঞ্জাবীর আবেদন কোনদিনও শেষ হবেনা।

 

বরিশাল নগরীর বিভিন্ন শপিংমলের শাড়ি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারী ও খুচরা শাড়ি বিক্রেতারা এবছর ভারত থেকে গুজরাটী শিল্ক, বাহা শিল্ক, মনিপুরি কাতান, মনিপুরি সুতি, পিউর শীল্ক, জর্জেট ও নেটের উপর কাজ করা শাড়ি আমদানী করেছেন। তবে এবার বেশীর-ভাগ ক্রেতারে পছন্দে রয়েছে ঢাকাই জামদানী, টাঙ্গাইল জামদানী, তাঁতের শাড়ি, সফট শিল্ক আর জুট জামদানী। এগুলোর দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এবছর ঈদে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশী। ভ্যাপসা গরমকে মাথায় রেখেই এবার আরামদায়ক শাড়ি খুঁজছেন ক্রেতারা।

 

ঈদ-উল ফিতরকে ঘিরে নগরীর নামিদামী শপিংমলের চেয়ে ফুটপাতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। নগর ভবনের সামনে ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, এবার পোশাকের এতো দাম যে বলার মতো না, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য যা খুবই কষ্টসাধ্য। হাসান সিদ্দিক নামের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ব্রান্ডের পোশাকগুলো ভালো কিন্তু সেগুলোর দাম কয়েকগুণ বেশি রাখা হচ্ছে। বিপনিন বিতানগুলোতে যে পোশাকের দাম চার হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে, সেই একইরকম পোশাক আমরা ফুটপাত থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যেই ক্রয় করতে পারছি। তাই বাধ্য হয়েই ফুটপাতের দোকান থেকে ক্রয় করেছি।

 

তবে ক্রেতাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টপ-টেন বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক ইমরান শেখ বলেন, আমরা সব সময় পোশাকের গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। মানের সাথে আমাদের প্রতিটি পণ্যের দামটাও সামঞ্জস্য করে নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

অপরদিকে বরিশালে কসমেটিকস ও কাপড়ের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। সেক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তেমন কোন অভিযান নেই বললেই চলে। তবে ভোক্তার জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি পণ্যে যেখানে যৌক্তিক একটা লাভ করা যায়, সেখানে বরিশালে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ লাভ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এছাড়া অনেকে অনৈতিকভাবে আলাদা করে সংযুক্ত করেছে ভ্যাট। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

চকবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাস্টমারের ভিড় কম-বেশি লেগেই রয়েছে। বিকাশ পেমেন্ট সেবার কারণে টাকার হিসেব রাখা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তার সাথে ভাংতি বা নকল টাকার ঝামেলা নেই। পাশাপাশি দিন শেষে অনেক ক্যাশ টাকা রাখার ঝুঁকি নিয়েও ভাবতে হয়না।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version