প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৩ বছর পরও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করর্পোরেশন) শিল্পনগরীর অধিকাংশ প্লট বরাদ্দ হয়নি। বরাদ্দ হওয়া প্লটগুলোও খালি পড়ে আছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, ভূমি উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন, পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্লটগুলোতে শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না। এ ছাড়া বিসিকের জমির দাম তুলনামূলক বেশি।
সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নের লক্ষ্যে ৪১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যায়ে ডিঙ্গেদহ এলাকায় ২০২১ সালের জুন মাসে ১৭.৫৮ একর জমির ওপর বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা হয়। সেখানে ৬ ক্যাটাগরির মোট ৭৮টি প্লট করা হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার বর্গফুটের ১০টি, ১০ হাজার বর্গফুটের ১০টি, ৯ হাজার বর্গফুটের ২০টি, ৬ হাজার বর্গফুটের ৫টি এবং ৫ থেকে ১৬ হাজার বর্গফুটের ৩৩টি প্লট আছে। প্রতি শতকের বিক্রয়মূল্য ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ধরা হয়। এ পর্যন্ত ২৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে ৫৪টি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শিল্পনগরীর ৭৮টি প্লটের মধ্যে ৭৭টিই খালি পড়ে আছে। সেখানে অসমতল জমিতে ঘাস আর জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। প্রকল্পের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে সাজেন্টাস নামের একটি কারখানার আংশিক তৈরি হয়ে আছে। গুড়পুকুর করর্পোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানের প্লটে কিছু ইট স্তূপ করে রাখা আছে। আর কোথাও শিল্পকারখানা তৈরির কাজ চোখে পড়েনি।
সাজেন্টাসের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেনের অভিযোগ, প্লট বরাদ্দের পর বিসিকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ভূমি উন্নয়নের কথা দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি। প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে তিনি সেখানে মাটি ভরাট করে কারখানা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। সেখানে আরও ৩ লাখ টাকার মাটি ভরাটের প্রয়োজন। কোনো কোনো প্লটের জমি এতটাই নিচু যে ব্যবহারের উপযোগী করতে অন্তত ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। অনেকেই প্লট কিনতে এলেও নিচু জমির কারণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
কৃষাণ অ্যাগ্রো কেমিক্যালসের মালিক ফেরদৌস আলম বলেন, আশপাশের জমির তুলনায় বিসিক প্লটে জমির মূল্য ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। তারপরও অনেক আশা নিয়ে প্লট নিয়েছিলেন। তবে অর্থের জোগান না পাওয়ায় কারখানা তৈরি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরাদ্দকৃত ২৪টি প্লটের মধ্যে ২০ জন শিল্পোদ্যোক্তা সেখানে কীটনাশক ও মিশ্র সার উৎপাদন, প্যাকেজিং এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ ও আমদানি করা সার-কীটনাশক রি-প্যাকিংয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বাকি প্লটগুলোতে পানি শোধনকরণ, যন্ত্রপাতি তৈরি, কেমিক্যাল উৎপাদন ও সরবরাহ এবং হালকা প্রকৌশল কারখানা তৈরির কথা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সেলিম আহমেদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিসিক বর্তমানে জমি বিক্রি করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করতে চায়। শিল্পকারখানা গড়তে উদ্যোক্তাদের পক্ষে কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না। ব্যাংকগুলোও ঝুঁকি নিতে চায় না। অথচ একসময় বিসিকের সহযোগিতায় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে চুয়াডাঙ্গায় বিসিক শিল্পনগরী জমজমাট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক এ.বি.এম আনিসুজ্জামানের দাবি, দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের বেশির ভাগ বিসিক শিল্পনগরীতে কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে কয়েক বছর সময় লেগেছে। যেকোনো বিসিক শিল্পনগরীর তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় প্লটের দামও কম। স্থানীয় শিল্পপতিদের আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিসিক কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যে কৃষিভিত্তিক একটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা এ বছরই উৎপাদনে যাবে বলে সম্ভাবনা আছে। আর ভূমি উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ একটি চলমান প্রক্রিয়া। শীঘ্রই এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।
সেমিনার অনুষ্ঠিত বিসিক নগরী নিয়ে সংকট মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সম্প্রতি ‘চুয়াডাঙ্গা জেলায় শিল্পায়নের ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নে বিসিক শিল্পনগরীর চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণের উপায়’ বিষয়ে এক সেমিনার আয়োজন করেছে। সেমিনারে জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিসিক শিল্পনগরীর প্লটের জমির দাম আশপাশের জমির তুলনায় বেশি ও এসব জমি স্থাপনা তৈরির অনুপযোগী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে পদে পদে বিড়ম্বনা হয় আর ঋণসহায়তা পেতে বিসিক ও ব্যাংকগুলোর যথাযথ ভূমিকার অভাব রয়েছে।
কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ, দাবি ও সুপারিশ শোনেন। এরপর তারা ঈদের পর একটি দল গঠন করে কুষ্টিয়া বিসিক পরিদর্শন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ এবং অর্থছাড় বিষয়ে ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য