-->

প্রশিক্ষণ ও একটি সেলাই মেশিন বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ নারীদের জীবনযাত্রা

মো. শাহিদুল ইসলাম, কুমিল্লা
প্রশিক্ষণ ও একটি সেলাই মেশিন বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ নারীদের জীবনযাত্রা
ক্যাপশন: শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারীরা

কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ভানি ইউনিয়নের অজ পাড়াগাঁও আসাদনগর গ্রামের গাড়ী চালক স্বামীর আয়ের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল তিন কন্যা নিয়ে আঁখি বেগমের অভাবের সংসার। কিন্তু কয়েক বছর আগে ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের উদ্যোগে পুরো দেবিদ্বারব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন আঁখি বেগম। সফলতার সহিত প্রশিক্ষণ শেষে পান একটি সেলাই মেশিনসহ আনুসাঙ্গিক সহায়তা। এর পরের গল্পটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর।

 

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে বেশ কর্মব্যস্ত তিনি। আশেপাশের বউ- মেয়েরা ঈদের নতুন জামা সেলাই কিংবা কেউ তার ছোট শিশুর জন্য একটি ফ্রক বানাতে এসেছেন আঁখির কাছে। গ্রাহকরা যেখানে বাজারে পেশাদার দর্জির দোকানে একটি থ্রীপিস সেলাই করতে দিতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সেখানে আঁখিকে দিতে হয় মাত্র ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তাই গ্রাহকরাও বেশ খুশি।

 

আঁখি বেগম বলেন, স্বামীর স্বল্প বেতন দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে বেশ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হতো। পরে গ্রামের একজনের মাধ্যমে ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের সেলাই প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে পারি এবং যোগাযোগ করে ভর্তি হই প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। প্রশিক্ষণ শেষে একটি নতুন সেলাই মেশিন, কেচি, গজ ফিতা ইত্যাদি দেওয়া হয়। বাড়িতে সেলাই মেশিন এবং কাজ জানা থাকায় নিজের সংসারের পোশাক তৈরি দিয়েই প্রথমে কাজ শুরু করি। ধীরে ধীরে আশেপাশের অনেকেই কাপড় নিয়ে আসতে শুরু করে।

 

তিনি আরো বলেন, সেলাই কাজ করে যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে সংসারের ছোটখাটো খরচ যোগাতে এখন আর অপেক্ষায় থাকতে হয়না স্বামীর টাকা পাঠানোর জন্য। মেয়েদের পোশাক থেকে সাজ-সরাঞ্জাম এবং স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য মানবিক ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের অবদান সারাজীবন মনে রাখব।

 

একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আয়েশা, ফারজানা, সাদিয়াদের গল্পগুলো ঠিক একই রকম।

 

দেবিদ্বার উপজেলার বাকসার গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (ইনক) এর সভাপতি ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের করোনা মহামারীতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান, খাদ্য সহায়তা এবং শিক্ষা ও নানামূখী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি দেবিদ্বারের সাধারণ মানুষের মাঝে বেশ প্রসংশিত। গত কয়েকবছর ধরে এলাকার জটিল দরিদ্র রোগীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান এবং ইমাম সাহেবদের ওমরা হজ্বের ব্যাবস্থা করা এবং জাতীয় দিবসগুলোতে সফলতার সাথে একঝাঁক আত্মপ্রত্যয়ীদের একটি বড় টিম নিয়ে নানা ব্যতিক্রমী কার্যক্রম করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন সুদূর প্রবাস থেকে।

 

শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন দেবিদ্বার চ্যাপ্টারের যুগ্ন আহ্বায়ক শাহিনুর লিপি বলেন, দেবিদ্বারের প্রতি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে গ্রামীণ পিছিয়ে পরা সুবিধা বঞ্চিত নারীদের স্বাবলম্বী ও আত্মপ্রত্যয়ী করার জন্য বিনামূল্যে ফ্রি সেলাই প্রশিক্ষণ চালিয়ে আসছি আমরা। প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন মহিলাকে বাছাই করে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। পরে তাদের মধ্যে যারা খুব বেশি অসহায় তাদের সেলাই মেশিন, কেচি, গজ ফিতা সহ আনুসাঙ্গিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মহিলাকে প্রশিক্ষণ এবং তাদের মধ্যে ১৫০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।

 

প্রচার বিমুখ এবং একরকম পর্দার আড়ালে থেকে এই মানবিক কার্যক্রমের রুপকার ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য আত্নতুষ্টি আর নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই। তিনি মনে করেন, সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি তার পাশের অন্য মানুষটির প্রতি যথাযথ দায়িত্বশীল না হয়, তবে তার একার সুখ, শান্তি আর ভাল থাকার কোন মূল্য নেই। আপনার সামর্থ্য যদি সীমিত হয় তবে ছোট আকারে, আর যদি আপনি সামর্থ্যবান হন তবে একটু ব্যাপক পরিসরে মানুষের পাশে থাকাকেই বলে মানবিকতা। আর এই মানবিকতার পথ ধরে এলাকার অসহায়, দরিদ্র এবং বিপদগ্রস্থ মানুষের আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে এগিয়ে চলেছেন মানবিক ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version