রেশমনগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। এটি একদিকে যেমন বহন করছে রাজশাহীর পরিচিতি তেমন বহন করে চলছে শত বছরের ঐতিহ্য। যুগ পাল্টেছে। পাল্টাচ্ছে মানুষের ফ্যাশন ও অভিরুচি। কিন্তু রেশম বা রেশমি পণ্যের চাহিদা যেন এক রত্তিও কমেনি। রেশম এখনও পোশাক জগতে টিকে রয়েছে পুরোনো সেই ঐতিহ্য ও আভিজাত্য নিয়ে। সময়ের বিবর্তনে রেশমের সেই জৌলুস নেই ঠিকই। তবে ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে এখনও এক টুকরো রেশমি পোশাক সবার কাছেই অনন্য ও স্বতন্ত্র। সারা বছর তো বটেই ঈদ এলেও তাই রেশম পোশাক রাজত্ব করে রাজকীয় এ শহরে।
কোনো বয়স নেই, ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছে আজও সমান অর্থ বহন করছে রেশমি পোশাক। আর রাজশাহীর নাম নিলেই যেমন রেশমের নাম ওঠে। তেমনি রেশমের খোঁজ করলেও উঠে আসে রাজশাহীর নাম। রাজশাহী ও রেশম যেন একই সুতোয় গাঁথা। একটি বহন করে আরেকটির পরিচিতি। তাই আজও রেশম নগর বলেই পরিচিত হয় রাজশাহী। আর রেশমের এ খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পরিচিতি পেয়েছে বর্হিবিশ্বেও।
আধুনিকতার স্পর্শে দিনে দিনে মানুষের রুচি ও পছন্দ নিত্যই বদলাচ্ছে। কিন্তু এ চোখ ধাঁধানো ফ্যাশনের ভিড়ে আজও অমলিন রেশমের ঐতিহ্য। সহস্র পণ্যের মধ্যেও বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতিতে রেশমের আভিজাত্য রয়েছে অটুট। এ ঈদেও তাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে রেশমি পোশাক। কারণ রেশমি পোশাক ছাড়া রাজশাহীর অনেক মানুষেরই ঈদ আনন্দ যেন অপরিপূর্ণ থেকে যায়। হরেক রকম পোশাক কেনাকাটার তালিকায় থাকলেও একটি পাঞ্জাবি, একটি শাড়ি বা একটি রেশমি থ্রিপিস যেন চাই-ই চাই। রমজানের শেষ মুহূর্তে তাই জমে উঠেছে রাজশাহীর রেশমপল্লী।
ঈদুল ফিতর যতই ঘনিয়ে আসছে। ততই বাড়ছে বেচাকেনা। ঈদের কেনাকাটা সারতে রাজশাহীর বিসিক নগরীর সিল্ক শো-রুমগুলোতে এখন সকাল-বিকেল বা সন্ধ্যা-রাত নেই। সব সময়ই ভিড় লেগে থাকছে ক্রেতারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেশমের এ শো-রুমগুলোতে সারা বছরই কেনাকাটা হয়। তবে ঈদে হয় সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এ সময় তাদের ব্যস্ততাও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আর প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমকে টার্গেট করে নিত্য নতুন রং ও বাহারি ডিজাইনের রেশমের শাড়ি ও বিভিন্ন পোশাক তৈরি করে থাকেন তারা। আবহাওয়ার সঙ্গে উৎসবের মিশেল ঘটাতে মাথায় রাখেন ক্রেতাদের বৈচিত্র্যময় রুচি ও পছন্দের কথা। রেশমি পোশাকে নতুনত্বের ছোঁয়া আনতে তাদের প্রয়াস থাকে আপ্রাণ। এবারও সাধ্যমতো কিছু স্বতন্ত্র ডিজাইন নিয়ে এসেছেন রুচিশীল ক্রেতাদের জন্য।
রাজশাহীর বিসিক শিল্প নগরীর সব চেয়ে বড় ফ্যাক্টরি ও শো-রুম হচ্ছে সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেড। তাই ঈদে সব শ্রেণির ক্রেতাদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এ প্রতিষ্ঠানের শো-রুম। এক ছাদের নিচেই সব ধরনের পণ্যের বিশাল সমাহার রয়েছে তাদের। তাই ঈদ বাণিজ্যে সবার শীর্ষেই থাকেন তারা।
চার বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে এখানে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা চাকরিজীবী আরাফাত হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ঈদের আনুষ্ঠানিক ছুটি শুরু। তবে ছুটির আমেজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছেন কেনাকাটা করতে। নিজের জন্য পাঞ্জাবি এবং স্ত্রী-সন্তানের জন্য শাড়ি ও স্কার্ট নেবেন। এ বছর অনেক নতুন কালেকশন এসেছে। মোটামুটি সবগুলোই তার কাছে ভালো লাগছে। এর মধ্যে থেকে নিজেদের জন্য পছন্দ করবেন। তবে গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার রেশম পণ্যের দাম অনেকগুণ বেশি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দেখা যায়, রেশমের এ বৃহৎ শো-রুমে রেশম ও মসলিনের পাঞ্জাবি ও শাড়িই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের পাঞ্জাবি ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। রেশমের থ্রিপিস ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজারের ওপরেও রয়েছে। আর শাড়ি ২ হাজার ৫৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা ও তার ওপরেও রয়েছে। রেশম ছাড়াও সুতির পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। মসলিন সিল্ক রয়েছে ৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। আর মটকা সিল্ক রয়েছে ৪ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
সিল্কের শার্ট রয়েছে ১ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। ফুলহাতা ও হাফহাতা ডিজাইনের বিভিন্ন রঙের ফতুয়া রয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। সুতি শার্ট রয়েছে ১ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি, সফট সিল্ক শাড়ি রয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।
এন্ডি সিল্ক রয়েছে ৪ সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের। শো-রুম ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, শেষ মুহূর্তে তাদের শো-রুমে কেনাকাটা জমে উঠেছে। রমজানের প্রথম দশকে ঈদের বিক্রি শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভিড় কম ছিল। এখন ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। রেশম পণ্য বলে কথা, চাহিদা তো থাকবেই। তাই রাজশাহীর মানুষ তো কেনাকাটা করছেনই পাশাপাশি যারা ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঈদ করতে রাজশাহী আসছেন তারাও কেনাকাটা করছেন এখানে। চাঁদরাত পর্যন্ত তাদের এ বেচাকেনা চলবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য