খরায় পুড়ছে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চল। আমের শহরে দিনের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এতে বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানির সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও গুটি ঝরে পড়া ঠেকানো সম্ভব না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এবার আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা। চাষিদের দাবি ইতিমধ্যে অনেক বাগানে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এ বছর এসব উপজেলার আমের বাগানগুলোতে মুকুল এসেছিল চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এরপর আবার গত কয়েক দিনের অতি তাপমাত্রায় আমের বোঁটা শুকিয়ে ঝরে পড়ে যাচ্ছে গুটি। এতে পানির সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবার জেলার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমি থেকে আমচাষিদের থেকে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৫২৮ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭০ টাকা।
এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহীতে গত চার দিনে মৃদু তাপপ্রবাহ থাকলেও গত দুদিনে তা মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
এমন বৈরী আবহাওয়া আমের গুটি ঝরে পড়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দুর্গাপুরে দেবীপুর গ্রামের আমচাষি আব্দুর রশিদ প্রামাণিক। তাঁর দাবি-দাবদাহে আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে আর হলুদ বর্ণ ধারণ করে তা ঝরে পড়ছে। তিনি নিজের ও লিজ নিয়ে এবার শতাধিক আমগাছের মুকুলের পরিচর্যা করছেন।
আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। তা না হলে আমচাষিদের বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে তীব্র তাপে গাছ থেকে গুটি ঝরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাগান থেকে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে।’
পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আমচাষি আইয়ুব আলী জানান, আমের গুটি ঝরে পড়া ঠেকাতে প্রায় দিনই বিকেলে আমগাছে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু বাগানের সব গাছ পানি দিয়ে ভেজানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গুটি ঝরে যাওয়াও ঠেকানো যাচ্ছে না।
বাঘা উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ১০ থেকে ১২টি আমবাগান লিজ নেওয়া আছে। প্রায় বাগানের আমগাছে গুটি ঝরে পড়ছে। এ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে এ বছর আমের ফলন বিপর্যয় হতে পারে। এতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে সালমা বলেন, ‘প্রতিবছরই এ সময় খরা দেখা দেয়। আমচাষিদের বিকেলের পর আমগাছের গোড়ায় সেচ দেয়। তখন আমের গুটিতে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়, তাহলে গুটি ঝরে পড়া রোধ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্য আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে। সব উপজেলায় খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের পরামর্শ দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তাপপ্রবাহের কারণে এ বছর রাজশাহীতে আমের ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা আছে কিনা, এ প্রসঙ্গে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমের ফলন বিপর্যয়ের আপাতত সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ সব আমের গুটিই টিকবে না। অনেক গুটি পড়ে যাবে। আর বৃষ্টি হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আশা করছি আমের আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো ঘাটতি হবে না।’
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য