নাব্যতা হারানো ব্রহ্মপুত্র নদ এখন কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে রূপ নিয়েছে। শুনতে বেখাপ্পা লাগলেও এমনটাই যেন ঘটেছে ময়মনসিংহে। নদে জেগে ওঠা বালুচরে বসানো হয়েছে কিটকট চেয়ার। যার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গরিবের কক্সবাজার’ শিরোনামে রীতিমতো ভাইরাল।
আর তাই দলে দলে মানুষ যাচ্ছেন ময়মনসিংহ জয়নুল আবেদিন পার্কের বিপরীতে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে। ভিড় করছেন টিকটকাররা। বানানো হচ্ছে টিকটক, রিলস। তবে নাগরিক সমাজ বলছে, নদ খনন কাজের কারণে জেগে উঠা চর দখল করে ব্যবসা করতেই অভিনব কায়দায় চলছে দখল প্রক্রিয়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিটকট চেয়ারে কেউ বসে আছেন আবার কেউবা শুয়ে আছেন। কেউ আবার তুলে যাচ্ছেন ছবি। সেখানে দেখা মেলে টিকটকারদেরও। ফলোয়ারদের জন্য তারা বানাচ্ছেন পছন্দের গানের টিকটক, রিলস। এ ছাড়া নদের মাঝখানে কাপড় টানিয়ে বানানো হয়েছে ড্রেসিং রুম। ইতোমধ্যে নদের মাঝে বসেছে খাবারের দোকানও।তবে এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ময়মনসিংহের নাগরিক সমাজ। নদের জমি দখলের এটি একটি অভিনব কায়দা বলে মনে করছেন তারা।
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ ভোরের আকাশকে বলেন, কায়দাটি খুবই অভিনব। নদটা দখল করে টাকা আয় করার একটি প্রক্রিয়া এটি। নদ শেষ হয়ে যাক, কিন্তু দখল-ব্যবসা করতে হবে। নদের পাড়ে কিছু মানুষ আসবে, খোলা জায়গা যেহেতু আর নেই সেহেতু মানুষজন এখানে এসে হাওয়া খাবে এবং টাকা দেবে। ফলে নদটা ধীরে ধীরে দখল হবে এবং বিশেষ শ্রেণির মানুষের পকেট ভারী হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসুফ ভোরের আকাশকে বলেন, সৌন্দর্যের নামে নদ দখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এসব চেয়ার উচ্ছেদ করার পাশাপাশি কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই যারা এই কাজটি করেছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। যাতে আবার কেউ দখলের চিন্তা না করতে পারে।
তবে যারা এই চেয়ার বসিয়েছেন তারা কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রুহুল আমিন নামের এক উদ্যোক্তা মুঠোফোনে জানিয়েছেন, কয়েকজন মিলে তারা এই কাজ করেছেন। বর্তমানে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিচ্ছেন না তারা। ভবিষ্যতে নদের তীরে একটি রেস্টুরেন্ট দেবেন তারা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, বিষয়টি পহেলা বৈশাখের দিন আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ভেবেছিলাম নববর্ষের জন্য সাময়িক ছিল এটা। ব্যবসায়িক ও অন্য যেকোনো উদ্দেশ্যে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য