-->

রাস্তার জায়গায় দোকান, মসজিদের জমিতে নির্মিত হচ্ছে রাস্তা

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ
রাস্তার জায়গায় দোকান, মসজিদের জমিতে নির্মিত হচ্ছে রাস্তা
মসজিদের জায়গায় রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে

মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের ফারিরচর এলাকায় রাস্তার জায়গায় দোকান বসিয়ে মসজিদের জমিতে রাস্তা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফারিরচর পুরাতন জামে মসজিদের পূর্বপাশে আর.এস রেকর্ডীয় দাগে সরকারি রাস্তার জমি রয়েছে। রাস্তার সাথেই পশ্চিম পাশে সংযুক্ত মসজিদের নামে ওয়াকফাকৃত রেকর্ডীয় ভূমি বিদ্যমান। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি রাস্তার জমি দখল করে দোকানপাট করে আসছে এবং মসজিদের নামে ওয়াকফাকৃত জমির উপর দিয়ে সাধারণ রাস্তা দিয়ে রেখেছে। বর্তমানে রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ শুরু হলে মসজিদের ওয়াকফাকৃত ভূমি মসজিদকে বুঝিয়ে দিয়ে সরকারি (রাস্তার) জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

 

মসজিদ কমিটির সভাপতির জমি মসজিদের জমির পেছনে। মসজিদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ হলে মসজিদের সভাপতির জমি রাস্তার সাথে থাকবে। আর সরকারি জমিতে রাস্তা নির্মাণ হলে তার জমি রাস্তার সাথে থাকবে না। এজন্য তিনি রাস্তার জমি ছেড়ে মসজিদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও তার আত্মীয়-স্বজন রাস্তার জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভোগ করে আসছে। এ কারণে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মসজিদের জমি রক্ষায় কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে মসজিদের জমির উপর দিয়ে সরকারি রাস্তা নির্মাণের জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের ওয়াকফ করা জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তার জন্য নির্ধারিত রেকর্ডীয় জমির উপর কাঁচা, আধা পাকা ও পাকা স্থাপনা বসিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন কিছু লোক। এসময় এসব অবৈধ স্থাপনার ভাড়া উঠিয়ে মসজিদের ফান্ডে জমা দেয়া হয় বলে দাবি করেন মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন শেখ।

 

তবে স্থানীয়রা জানান, মসজিদের নাম করে দোকানপাট বসানো হলেও এর ভাড়া মসজিদের ফান্ডে জমা দেয়া হয়না। মাঝে মাঝে মোটা টাকার বিনিময়ে এসব দোকানের স্বত্ত¦ হস্তান্তর করা হয়। সেসব টাকাও মসজিদের ফান্ডে জমা দেয়া হয়না। মসজিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেগুলো আত্মসাৎ করেন বলে দাবি স্থানীয়দের।

 

অভিযোগকারী মো. আব্দুর রহিম বলেন, গ্রামের রাস্তাটি পাকাকরণ ও পাশে চওড়া করা হবে। কিন্ত কিছু অসাধু ব্যক্তি রাস্তার জায়গায় পাকা স্থাপনা করে দোকান ঘর উঠিয়েছেন সেগুলো নিজেরা ভোগ দখলে করছেন। এখন সরকারি জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ হলে এসব অবৈধ স্থাপনা ও দোকানগুলো ভাঙা পরবে। একারণে অবৈধ দখলদাররা দোকান ঘর না ভেঙে রাস্তার পাশে মসজিদের জায়গা দিয়ে রাস্তাটি করার চেষ্টা করছে।

 

সরকারি জমিতে অবস্থিত এক দোকান ঘরের মালিক মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, রাস্তার এই জায়গা খাল ছিলো। প্রায় ১৫-২০ বছর আগে মসজিদ কমিটির লোকজন মাটি দিয়ে সেই খাল ভরাট করেছে। এরপর থেকে মসজিদ কমিটির লোকজন আমাদেরকে সেখানে দোকান বসানোর অনুমোদন দেয়। সেজন্য আমরা এখানে দোকান ঘর বসিয়ে ব্যবসা করছি। দোকান বাবদ ভাড়া দিতে হয় কি’না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রতিমাসে ২শ টাকা করে মসজিদে ভাড়া দেই। তবে গত আড়াই বছরে কোন দোকানের ভাড়ার টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে জানান মসজিদ কমিটির সভাপতি ও স্থানীয়রা।

 

৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় আদালত সর্দার, আব্দুল কাদের, মো. শাহ আলম ও নুর মোহাম্মদ সহ বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের একটাই দাবি মসজিদের ওয়াকফকৃত জমি মসজিদকে বুঝিয়ে দেয়া হোক আর রাস্তার জন্য নির্ধারিত সরকারি জমির উপর দিয়ে রাস্তা করা হোক।

 

মসজিদের বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন শেখ বলেন, মসজিদের আগের কমিটি খাসের জায়গায় ৮টি দোকান ঘর বসানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখান থেকে যা ভাড়া পাওয়া যায় তা দিয়ে মসজিদের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। রাস্তার জন্য নির্ধারিত সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনে দোকান ঘরগুলোর কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয়া হবে।

 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

তবে সদর ইউএনও লিটন ঢালী বলেন, অভিযোগটি যেহেতু ডিসি স্যার বরাবর করা হয়েছে তাই ডিসি স্যারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাকে যেহেতু বিষয়টি অবগত করেছেন আমি বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ডিসি স্যারের কাছে উত্থাপন করবো।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version