-->

একটি ব্রিজ ঘোঁচাতে পারে ৫০ বছরের মানুষের দুঃখ

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
একটি ব্রিজ ঘোঁচাতে পারে ৫০ বছরের মানুষের দুঃখ
আনোয়ারার সাপমারা খাল

‘ভালো করে ছবি তুলে সরকারকে দেখান আমরা কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা কত কষ্ট করে পড়াশোনা করতেছে। সেটা ভালো করে ছবি তুলে সবাইকে দেখান। আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। দেশের এত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।’

 

এভাবেই কথাগুলো বলেছেন খুশি আক্তার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের অবহেলিত ৫নং দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। নিজের মেয়েকে নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে, দেখেশুনে পা ফেলে উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন এবং ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নবাসীর গলার কাটা সাপমারা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটি পার হচ্ছিলেন। এমন সময় ছবি তুলতে দেখে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কথা এভাবে তুলে ধরেন খুশি আক্তার নামের ২৮ বছর বয়সি এই মহিলা।

 

শুধু খুশি নন। সাপমারা খালের এই বাঁশের সাঁকোটি নিয়ে কষ্টের গল্প শুনিয়েছেন দু’পারের অনেকেই। আবু সৈয়দ নামের আরেক যুবক বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা সব সময় আমাদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা আমাদের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার বলেছি। ওনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে এটা ওনার মাথায় আছে। তাহলে কেন জানিনা এই সাঁকোটার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। জানিনা এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়! আমাদের পূর্ব পুরুষ ধরে এই কষ্ট ভয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। জানিনা আর কত যুগ ধরে এই ভোগান্তি বয়ে বেড়াতে হবে।’

 

সরেজমিনে উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের ৫নং দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ড এবং ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের ৭নং খুরুস্কুল ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটির দুপাশ ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের জোড়াতালি দিয়ে বানানো হয়েছে সাঁকোটি। সাঁকোটি পার হতে যে কারো শরীর কেঁপে উঠবে ভয়ে। সামান্য বেখেয়ালে একটু পা পিছলালেই পড়তে হবে সোজা গভীর খালে। খালের পারকী এলাকায় বাঁধ কারণে পানি সঞ্চালন বন্ধ থাকায় এখন পানি কম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে খালটি। খালটির পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে সরেঙ্গা বাজার। তাই প্রয়োজনীয় বাজার সদয় করতে প্রতিনিয়ত খুরুস্কুল বাসীর সাঁকোটি পার হয়ে আসতে হয় বাজারে। আর অপরদিকে পূর্ব প্রান্তে প্রাইমারি স্কুল হওয়ার কারণে সরেঙ্গা বাসীদের যেতে হয় খুরুস্কুল প্রান্তে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সাঁকোটি পার হয়ে যেতে হচ্ছে এপার-ওপার। একপাশ দিয়ে একজন আসলে অপর পাশ দিয়ে আরেকজন আসার সুযোগ নেই। পুরো আনোয়ারা উপজেলা ঘুরে এমন ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতীয় আরেকটা সাঁকোর দেখা মিলবেনা। তাই রায়পুর- জুঁইদণ্ডি ইউনিয়ন দুটির ২০ হাজার মানুষের একটাই চাওয়া এই সাঁকোটির স্থলে একটা সেতু হওয়া।

 

সাপমারা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটি নিয়ে আনোয়ারা ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলার সাপমারা খালে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version