মানিকগঞ্জ শিবালয়ে যমুনা নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কোটি কোটি টাকা খরচে নির্মিত নদী তীররক্ষা বাঁধ, বিস্তীর্ণ কৃষিজমি, বসতবাড়ি, স্কুলভবনসহ সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনা।
স্থানীয় প্রশাসনের একশ্রেণীর আসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক সংগঠনের কথিত নেতা ও ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবত রমরমা মাটি বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুচক্র।
জানা যায়, আরিচা নদীবন্দর সংলগ্ন নিহালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাফরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ১৫ টি ড্রেজার বসিয়ে প্রকাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালু সড়কের পাশে বেড বানিয়ে স্তুুপ করে রাখা হচ্ছে। পরে চাহিদা অনুযায়ী চলাচল নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক ট্রলি ও ড্রাম ট্রাক যোগে নির্মানাধীন শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় দেদারছে বিক্রি করছে চক্রটি। আবার সরকারি রাস্তা সুরঙ্গ করে স্থায়ী পাইপ বসিয়ে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরবর্তী জায়গায় দীর্ঘ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরাসরি মাটি বিক্রি করছে কেউ কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরিচা জাফরগঞ্জ ভায়া তেওতা সড়কের দুপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন করে জমা করা হচ্ছে। এযেন সাদা বালুর পাহাড়। এসব বালু অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে যমুনা নদীর নিহালপুর, তেওতা বাজার, পয়লা সমেজঘর, সাটঘর তেতা কেডিসিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।
জাফরগঞ্জ এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় শত শত হেক্টর কৃষি জমি, কোটি কোটি টকায় নির্মিত সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও গোয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দফায় দফার স্থানান্তর করা হয়েছে। ড্রেজারের দৌরাত্ম বন্ধ না হলে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী তীররক্ষা বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনে লিখিত আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তেওতা বাজার সংলগ্ন নদী পাড়ের মুদি দোকানদার বাচ্চু মিয়া বলেন, রিপোর্ট করে লাভ কি? প্রশাসন ও সাংবাদিকরা সবাই টাকা নেয়। ড্রেজার মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে আপনারাও কিছু নিয়ে যান। ওই দোকানদার আক্ষেপ করে বলেন, সরকার কৃষি জমি সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকলেও শিবালয়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিগণ।
তেওতা এলাকার বাসিন্দা ড্রেজার ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, প্রশাসনের সাথে লুকোচুরি করে ড্রেজার চালাচ্ছি। আমার মত অনেকেই এই ব্যবসায় জড়িত। কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালালে আমাদের ৪/৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে তেওতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি প্রতিনিয়ত স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিবালয় উপজেলা প্রশাসন কয়েকদিন পরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে ড্রেজার গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু দুই এক দিন পর আবার শুরু করে। এই সমস্যার স্থায়ীভাবে সমাধান কল্পে অচিরেই বালু মহাল চালু করা হবে।
শিবালয় ইউএনও মো. বেলাল হোসেন বলেন, অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবুও থেমে নেই অবৈধ এই ব্যবসা। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে স্থায়ীভাবে অবৈধ ড্রেজার বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য