সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর তীরে বিশাল চর এলাকাজুড়ে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী। গাছে গাছে ফুটেছে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলার চরে দেখা দিয়েছে এমন দৃশ্য। পাশেই নদীতে ছুটে চলেছে হরেক রকম নৌকা। শহর থেকে দূরে সে এক ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ। এমন দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ওইখানে ভিড় করছে শত শত মানুষ। সূর্যমুখী চাষাবাদে কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন বলে জানায় চাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কৈগাড়ী জড়তা গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ৬ বিঘা, সাইদুল ইসলাম ২ বিঘা, তারেক হোসেন ২ বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী চাষাবাদ করেছেন। বন্যায় চরের জমিতে পলি পরায় সূর্যমুখী ফুল ও গাছের বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো। গত দুই বছর ধরে এখানে এ চাষাবাদ হচ্ছে। সাধারণ এই সময় বসতিহীন চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা পরিত্যক্ত থাকে। কৃষি বিভাগের প্রনোদনা কর্মসূচির সহায়তায় চরে সূর্যমুখী চাষাবাদে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় বৈচিত্র্যময় এ চাষাবাদে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, চরে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে কৃষকরা এর চাষাবাদ করেছেন। মাটিতে লাইন ধরে এর বীজ বপন করা হয়। ১১০দিন পর ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায়। এ চাষাবাদে ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়। সামান্য সার ও কয়েকবার পানি দেওয়া ছাড়া তেমন কোন পরিশ্রম ও খরচ নেই।
কৃষকেরা জানায়, সদর উপজেলা কৃষি অফিস তাদের এই চাষাবাদে বীজ, রাসায়নিক সার সহ সব রকমের সহযোগীতা ও পরার্মশ দিচ্ছে। তাদের সূর্যমুখী গাছে প্রচুর ফুল ধরেছে। গত বছর তারা বিঘা প্রতি ৬ মন হারে সূর্যমুখি বীজ পেয়েছেন। যা ৫ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের চরের কৃষক সাইদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, আমি এ বছর ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে এই ফুল চাষে জমিতে সেচ ও সারের খরচ কম লাগে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ১০০ দিনেই ফলন হয়।
একই চরের কৃষক আব্দুল হামিদ ভোরের আকাশকে বলেন, স্বল্প ব্যয়ে বেশি ফলন পাওয়ায় দিন দিন আমাদের চরের কৃষকরা এই ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি ৬ বিঘা জমিতে এবার সূর্যমুখী চাষ করেছি। অন্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী ফুল চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আমরা খুব খুশি। কৃষি প্রণোদনার আওতায় আমরা বিনা মূল্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার পেয়েছি। স্বল্প ব্যয়ে বেশি ফলন পাওয়ায় ভবিষ্যতেও এই ফুল চাষ করব।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. আনোয়ার সাদাত ভোরের আকাশকে বলেন, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরল মুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যেকোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। আর এ কারণেই দিন দিন এ চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদর উপজেলায় এবার ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ হয়েছে। আমার চেষ্টা করছি চরাঞ্চলে এ চাষাবাদ আরো ছড়িয়ে দিতে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য