গ্রীষ্মের সেই নিস্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে সীতাকুণ্ডের প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ উপজেলাকে আলাদাভাবে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। যেন কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি। এ যেন শিল্পীর নরম তুলিতে আঁকা রক্তিম ফুলের সৌন্দর্য।
গ্রীষ্মের তীব্র গরম আর অবিরাম উষ্ণতায় যখন সমগ্র দেশ স্থবির, ঠিক তখনই জেগে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিমতা। প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে এমন রূপের দেখা মেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ডিভাইডারসহ সমগ্র উপজেলায়। মনে হবে লাল গালিচায় সাদর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে ভ্রমণপিপাসু অতিথিদের। গ্রীষ্মের তীব্র গরমের ক্লান্তি দূর করতে ফুলের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ নয়নে কৃষ্ণচূড়ায় ঠাঁই নেয় ক্লান্ত পথচারীরা।
পৌরসভা সংলগ্ন দিঘীর উত্তর-পূর্ব কোণে ফুলে ফুলে রঙিন বিশাল কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি পথচারীদের বিনোদনের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন, ইকোর্পাক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, হাফিজ জুট মিলস গেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ডিভাইডার সহ উপজেলার সর্বত্র কম-বেশি বাহারি রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে। স্নিগ্ধ সকাল, তপ্ত দুপুর কিংবা গৌধূলী বেলায় কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য অবলোকন করে পথচারীরা। স্কুল-কলেজ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রাঙ্গন সাজিয়ে নিয়েছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়ায়।
উপজেলায় কি পরিমাণ কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য, উপাত্ত না থাকলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, অতীতে গ্রাম-গঞ্জে হাজার হাজার কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ থাকলেও সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এখন শতাধিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে।
পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইদ্রিস ও ইমাম হোসেন বলেন, এক সময় অবসরে ঘুরাফেরা শেষে মনের ক্লান্তি দূর করতে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আশ্রয় নিতাম। বাচ্চারা লালে-লাল ফুলগুলো নিয়ে খেলা করতো মনের আনন্দে, যা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠতো। দুঃখ হলেও সত্য, প্রকৃতির সৌন্দর্যমণ্ডিত এ গাছগুলো অবাধে কাটা হলেও বৃক্ষরোপনের তালিকায় তেমন একটা স্থান পাচ্ছে না এ বৃক্ষ। গ্রাম-গঞ্জ ও পৌর এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো সংরক্ষণ ও বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড চৌধুরী পাড়া থেকে অ্যাডভোকেট এসএম রিয়াদুল আনোয়ার ও ৪নং ওয়ার্ড শেখনগর থেকে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মুন্না বলেন, কৃষ্ণচূড়ার রূপ-রসেরম সৌন্দর্য শুধু প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে নয় বরং পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিদেরও করছে বিমোহিত। আর কৃষ্ণচূড়ার রঙিন ফুলে সৃষ্টি করেছে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। ছোটবেলা থেকেই নান্দনিক বৃক্ষের প্রতি রয়েছে বিশেষ দূর্বলতা। হারিয়ে যাওয়া নান্দনিক বৃক্ষগুলো সংরক্ষণ খুবই প্রযোজন।
সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন, কৃষ্ণচূড়া একসময় প্রতিটি এলাকাকে রাঙিয়ে তুলতো। ঝড়ে পড়া ফুলগুলো পাকা সড়কে এমনভাবে পড়ে থাকতো যেন কেউ এলাকায় আগত অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিচ্ছে। কিন্ত অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কৃষ্ণচূড়ার সেই ঐতিহ্য ও জৌলুস আর নেই। গৃহায়ন-নগরায়নে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বনায়নের উপযোগী ভূমি। তাতেই বৃক্ষরোপনের তালিকা হতে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার মতো সৌন্দর্যবন্ধক ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো। তিনি নান্দনিক বৃক্ষগুলো সংরক্ষণ ও বনায়ণে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য