-->

৪২.২ ডিগ্রী তাপদাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, বাতাসে আগুনের হল্কা

শুকিয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে সবজি ও সড়কের গাছ

শিরিন জামান, চুয়াডাঙ্গা
৪২.২ ডিগ্রী তাপদাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, বাতাসে আগুনের হল্কা
ক্যাপশান- তীব্র তাপদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ

চুয়াডাঙ্গায় ১৪ দিন ধরে অব্যহত রয়েছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা। এখানে বাতাসে বইছে আগুনের হল্কা। দিনের আলো ফোটার সাথে বেলা যত বাড়তে থাকে সূর্যের চোখ রাঙ্গানিও ততো বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্র ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে । এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ১৪ শতাংশ।

 

অতি তীব্র তাপদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা অধিকাংশ গ্রামে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। আবার পানি দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না মাঠের সবজি আবাদ। শুকিয়ে যাচ্ছে সড়কের ধারের নিমসহ বিভিন্ন ফলজ ও বোনজ গাছসহ গাছের পাতা।

 

চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। একটানা ১৪ দিন তীব্র থেকে অতিতীব্র দাবদাহে হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

 

হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও চিকিৎসক রয়েছে ১০০ শয্যার হাসপাতালের অর্ধেক। সামান্য এই জনবল নিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা। গরম জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক রোগী। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া আউটডোরে শাত শত গরমজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর এ রোগে আক্রান্তের বেশীর রোগীই শিশু ও বৃদ্ধ।

 

তীব্র রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠাণ্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন।তাপদাহে ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় এক নারীসহ ৩ জন মারাগেছে। রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুত্যু হয় নির্মাণ শ্রমিক সিদ্দীক আলীর (৪৫)। মৃত সিদ্দিক আলী দামুড়হুদা উপজেলার পুরোনো বাস্তপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে।

 

সিদ্দীক আলী দুইদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরে রডমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। শুক্রবার তিনি তীব্র গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

 

শনিবার (২০ এপ্রিল) ৪২.৪ ডিগ্রি তাপদাহের দিন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা হিটস্ট্রোকে জাকির হোসেন (৩৬) নামে এক যুবক ও মর্জিনা খাতুন (৬০) নামে নারীর মৃত্যু হয়েছে।

 

শনিবার সকাল ৮ দিকে দামুড়হুদা উপজেলা ঠাকুরপুর গ্রামের মাঠে কাজ করার সময় জাকির হোসেন ও বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা সদরে মর্জিনা খাতুন (৬০) নামে এক নারী তীব্র তাপমাত্রায় হিটস্ট্রোকে মারা যান। জাকির হোসেন ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেন ছেলে ও মর্জিনা খাতুন উপজেলা সদরের ইউনিয়ন পরিষদ পাড়ার আজিম উদ্দীনের স্ত্রী।

 

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ৯ চায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৪৪ শতাংশ। দুপুর ১২ টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ০ (শূণ্য) ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমান ছিলো ১৬ শতাংশ। সূর্যের এ চোখ রাঙ্গানি আরো বেডে যায় বেলা ৩ টায়। এসময় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ১৪ শতাংশ।

 

বুধবার (২৪ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ।

 

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গত ১৪ ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। জেলায় হিট এলার্ট জারী আছে। এর মধ্যে তাপমাত্রার পারদ সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রীতে উঠা নামা করছে। এপ্রিল মাস জুড়েই এ অবস্থা থাকবে। তাপমাত্রা আরো বাড়বে।

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হিট এলাট মেনে চলতে। যেহেতু হিট স্ট্রোক হচ্ছে। সেহেতু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সঙ্গে সবার যে অবলম্বন বিশেষ করে কৃষি, গবাদি পশু-পাখির প্রতি যত্নশীল হতে হবে এ মুহূর্তে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সে অনুযায়ী মাইকিং করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

 

মন্তব্য

Beta version