-->
শিরোনাম

চ্য়ুাডাঙ্গায় তাপপ্রবাহে পুড়ছে জমির ফসল ক্ষতির তথ্য নেই কৃষি বিভাগে

শিরিন জামান, চুয়াডাঙ্গা
চ্য়ুাডাঙ্গায় তাপপ্রবাহে পুড়ছে জমির ফসল ক্ষতির তথ্য নেই কৃষি বিভাগে
ক্যাপশান- অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে পুড়ে যাচ্ছে জমির ফসল

চুয়াডাঙ্গা ক্রমাগত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে ফসলী জমির ফসল পুড়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, বরিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং দুপুর ১২ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

 

অব্যাহত তাপপ্রবাহে ফসলী জমিতে সেচ দিয়েও কৃষকরা তাদের ফসল রক্ষা করতে পারছে না। তাপপ্রবাহে জমির ফসল পুড়লেও সে সব তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। দাবদাহে এ জেলার ৪টি উপজেলায় পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতির পরিমান জানাতে বারং বার ব্যার্থ হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

 

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয়ার কথা বললেও কৃষকরা তাদেরই ইচ্ছামত ফসলী জমির পরিচর্যা করছেন।

 

তাপ প্রবাহের ফলে চুয়াডাঙ্গায় শুকিয়ে যাচ্ছে ধান ও সব্জি গাছ। এ কারনে এ মৌসুমে ফলন বিপর্যয় দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপের কারণে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে, লাগছে মাজরা পোকা। হেক্টরের পর হেক্টর জমির সব্জি শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করল্লা, শোসা, লালশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, পটল, লাউ, ঝিঙ্গে, তরমুজ, কচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা টানা প্রায় এক মাস ৩৮ থেকে প্রায় ৪৩ ডিগ্রী তাপমাত্রা উঠা নামা করছে। যার কারনে এ বিপর্যয়।

 

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দশমী গ্রামের ধান চাষী আবুল হাশেম বলেন, আমার ৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এ থেকে একশ মন ধান হতে পারে। ধান চাষে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা মত খরচ হয়েছে। ধানে মাজরা পোকা দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে ধান গাছের গোড়ায় পানি বাধিয়ে রেখেছি। এখনো কোন সমস্যা হয়নি। যদি সমস্যা হয় তবে খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হবো।

 

চুয়াডাঙ্গা সদরের বেলগাছি ঈদগাহ পাড়ার চাষী আরিব বিল্লাহ বলেন, তাপে ফলন্ত কলা গাছের পাতা ও কাঁদি পুড়ে যাচ্ছে, তরমুজের ফল ঝরে যাচ্ছে, বেগুন গাছে বেগুন ধরছেনা, কচু গাছ রোদে পুড়ে যাচ্ছে, শসা ক্ষেত তাপপ্রবাহে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, দেরীতে লাগানো ভূট্টা ক্ষেতেরও একই দশা। কোন ভাবেই এসব ফসল রক্ষা করা যাচ্ছেনা।

 

তিনি আরো বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্রমাগত সেচ দিয়ে কিছু ফসল ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর কত টাকা ব্যয় করে সেচ দেয়া যায়? তবুও ফসল রক্ষা করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চলমান তাপদাহের কারনে রবি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে যে বোরো ধান রয়েছে সে গুলো, সব্জি,ফল,ফসল রক্ষায় আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালাচ্ছি। বোরো ধান দানা পর্যায়ে চলে গেছে, কাজেই ওই ধানী জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখা, আম বাগানে পানি দেয়া ও গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অতি তাপবাহের কি কি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা এখনো নিদৃষ্ট করতে পারিনি, তবে সেটা নিরূপনের চেষ্টা চলছে। উপজেলা পর্যায়ে কাজ চলছে।

 

এ মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় কৃষকরা জেলায় ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করছে। সব্জির আবাদ হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৬ মেট্রিকটন। ধান ও সব্জি উৎপাদন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮১০ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৫ ডিগ্রীর বেশী তাপমাত্রা হলে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়না। ফুল পর্যায়ের ২ হাজার ৫০০ হেক্টর ধানের জমিতে সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জমিতে পানি ধরে রাখার কথা বলা হচ্ছে। ফসলের জমিতে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সেচের কোন বিকল্প নেই। ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে ধান চিটা হয়ে যায়,যেটা ঠেকানো দুস্কর।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version