তীব্র গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম আর রোদে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র এ গরমে পরিশ্রমের পর ঠান্ডা শরবতে গলা ভিজিয়ে প্রশান্তির ঢেকুর তুলছেন অনেকে। তাই গরমে বগুড়ার অলিগলিতে বেড়েছে শরবতের চাহিদা। রাস্তার পাশে ভ্যান-ঠেলাগাড়িতে এসব শরবত বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বাড়ায় পেশা পরিবর্তন করে অনেকেই ঝুঁকেছেন এ শরবত বিক্রিতে।
সোমবার শহরের সাতমাথা, ষ্টেশন রোড, ফতেহ আলী মোড়, নবাববাড়ী সড়ক, জলেশ্বরীতলা ও জজ কোর্ট মোড় এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে কিছু দূরত্বেই মিলছে শরবতের দোকান। এসব দোকানে সাধারণত লেবুর শরবত বিক্রি হচ্ছে যার প্রতি গ্লাসের মূল্য ১০ টাকা।
এছাড়া এ লেবু-পানির সঙ্গে শরবতের পাউডার মিশিয়ে তৈরি বিশেষ শরবত ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত শ্রমজীবী মানুষ আর পথচারীরা এ শরবতের ক্রেতা। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরম বাড়ায় শরবতের বিক্রিও বেশ বেড়েছে। বগুড়া জিলা স্কুলের সামনে শরবত বিক্রি করা সজিব মিয়া বলেন, লেবুর শরবত বেশি বিক্রি করি। লেবুর রসের সঙ্গে চিনি আর বিট লবন মিশিয়ে শরবত বানাই। এ শরবতের সঙ্গে ট্যাং পাওডার দিলে ১০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার শরবত বিক্রি হয়। আগে ভ্যানে করে ফলমূল ও কাঁচামালের ব্যবসা করতাম এখন শরবত বিক্রি করি।
যতদিন গরম থাকে ততদিন বিক্রি করবো। পরে অন্য ব্যবসায় যাবো। পেশা পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে সজিব মিয়া বলেন, যখন যেটার চাহিদা সেই ব্যবসা করি। এখন শরবতের চাহিদা আছে তাই এটা নিয়েই আছি। শহরের জলেশ্বরীতলা জজ কোর্ট মোড়ের শরবত বিক্রেতা কাজল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দুই হাজার-পঁচিশশো টাকার মতো শরবত বিক্রি হয়। কয়েক দিন গরম বেশি পড়ছে তাই বিক্রিও বেশি। শরবতে বরফ দিয়ে দেই। গরমে সবাই চায় একটু ঠান্ডা পানি খেতে।
শরবত বিক্রির আগের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় গিয়ে এক সময় একেক কাজ করি। কিছু দিন আগে শীতকালীন পোশাক জেকেট ও হরেক রকমের মোজা বিক্রি করেছি। গত রমজানের আগে নিজ জেলা বগুড়ার চেলোপাড়া বাড়িতে এসেছি। বসে না থেকে শরবত বিক্রি করছি। এসব বিক্রি করা কঠিন কোনো কাজ না। অল্প পুঁজির ব্যবসা, লাভও ভালো। সার্কিট হাউজ মোড়ে মাঠা বিক্রেতা ফিরোজ হোসেন বলেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে এক গ্লাস করে মাঠা খান। রিকশা চালকরাও খান।
দাম কম, মাত্র ২০ টাকায় বিক্রি করি। সকাল ১০টায় দোকান বসাই সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকি। হাজার তিনেক টাকার মতো বিক্রি হয়। রমজানের শুরু থেকে মাঠা বিক্রি করছি। বর্তমান যে গরম পড়েছে তাতে আমার দোকানে মাঠার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। শহরের ফতেহ আলী মোড়ে থাকা ভ্রাম্যমাণ এমন বেশ কয়েকজন শরবত বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা একসময় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
গরমে শরবতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তবে রাস্তার পাশে গালাপট্টি মোড়ে থাকা শরবতের দোকানে তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। দুই-একজন করে ক্রেতা আসছেন শরবত পান করে চলে যাচ্ছেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য