-->
শিরোনাম

তীব্র খরার পাটক্ষেত ফেটে চৌচির

দিশেহারা কৃষক

ফরিদপুর প্রতিনিধি
তীব্র খরার পাটক্ষেত ফেটে চৌচির
ক্যাপশন : দাবদাহে নুয়ে পড়ছে পাট গাছ

মাস দেড়েক আগে সোনালি আঁশ খ্যাত পাট বীজ বপন করেন কৃষকেরা। এরপর থেকে আর বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এমন অবস্থায় তীব্র দাবদাহে নুয়ে পড়ছে তাদের ক্ষেতের পাট গাছ। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেলো মেশিন দিয়েও ঠিকমতো সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত খরায় পাটক্ষেতসহ ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে।

 

পাট উৎপাদনে দেশসেরা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার চিত্র এটি। দুর্ভাবনা তাই জেঁকে বসেছে এখানকার কৃষকদের মনে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়ে থাকে সালথায়। তারপরেই পাশের নগরকান্দা উপজেলার অবস্থান। যে কারণে সালথাকে পাটের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। এবারও সালথা ও নগরকান্দায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে।

 

দেশের এই অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসলেই ফরিদপুর জেলার ‘ব্যান্ডিং সোনালি আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর’। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেই ভালোবাসার ফসল নষ্ট হলে শুধু কৃষকেরই নয়, কৃষিখাতেরও ক্ষতি বয়ে আনবে। যা দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই চলমান দাবদাহের দুশ্চিন্তায় এখন কৃষকের থেকে বিস্তার পাচ্ছে আরও অনেকের মনে। তবে কৃষিবিভাগ বলছে, এই খরায় পাটের ওপর প্রভাব পড়বে না।

 

মিজান শেখ নামে ৬৫ বছর বয়সী এক পাটচাষি তার জমিতে একা একা ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমের মধ্যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে একা একা পাটক্ষেত পরিচর্যা করছি। গত এক থেকে দেড়মাস আগে আমি আড়াই বিঘা জমিতে পাটবীজ বপন করেছি।

 

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি না নামায় অতিরিক্ত রোদের তাপে আমার সবগুলো জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে পাটের চারাও বেড়ে উঠছে না। এক থেকে দেড় মাসে প্রতিটি পাটের গাছ দুই হাত করে লম্বা হওয়া কথা। কিন্তু পানির অভাবে এখন পর্যন্ত দুই থেকে তিন ইঞ্চি করে লম্বা হয়েছে পাটের গাছ। এমন অবস্থায় বাড়তি টাকা খরচ করে সেলো মেশিন ঘনঘন সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এতেও কাজ হচ্ছে না। সকালে সেচ দিলে বিকালে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই এবার ভালো ফলন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

 

সালথার গট্টি ইউনিয়নের জয়ঝাপ গ্রামের পাটচাষি দবির হোসেন বলেন, এবার পাটচাষ করে চরম সমস্যায় আছি। তীব্র দাবদাহে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। পাটক্ষেতে বাড়ি সেচ দিতে গিয়ে ডিজেল কিনে কৃষকদের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মহান আল্লাহ যদি মাত্র একবার বৃষ্টি দিতেন, তাহলে আমাদের বুক সমান পাটের চারা বেড়ে উঠত। সেইসঙ্গে মাঠের পর মাঠ পাটের পাতা সবুজে ছেয়ে যেত।

 

হারুন শেখ নামে আরেক পাট চাষি বলেন, বৃষ্টি তো নেই। পাতালও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। সেলো মেশিন দিয়ে মাটির নিচে থেকেও পানি উঠিয়ে সেচ দিতে গিয়ে অনেক সময় ব্যর্থ হই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।

 

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, সালথায় এবারও প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাটের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তীব্র খরায় পাট গাছগুলো ধীরগতিতে বেড়ে উঠছে। তবে আরও এক সপ্তাহ পরেও যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে মাত্র ৭-৮ দিনেই পাটগাছ মানুষ সমান বেড়ে উঠবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version