-->

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনের স্বর্ণ যেন ‘তুচ্ছ ধাতু’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনের স্বর্ণ যেন ‘তুচ্ছ ধাতু’
চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে এবারও আলোচিত ‘স্বর্ণ ও গাড়ি ব্যবসায়ী’ মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনিরের অন্যতম সহযোগী রিয়াজ উদ্দিন (আনারস) প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তিনি প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনেছেন মাত্র দুই হাজার টাকায়। তবে এমন পানির দামে স্বর্ণ বাজারে নয়, মিলেছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হলফনামায়। যদিও দেশের বর্তমান বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকা। ৩০ এপ্রিল থেকে এ দাম কার্যকর করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

 

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় তৃতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান পদে অংশ নেয়া রিয়াজ উদ্দিনের ৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। এতে তার প্রতি ভরি স্বর্ণেরমূল্য দুই হাজার ও তার স্ত্রীর ২৫ ভরি স্বর্ণের মূল্য ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। যার প্রতি ভরির মূল্য দুই হাজার ৪০০ টাকা মাত্র। গত ৯ এপ্রিল জেলা রিটানিং কর্মকর্তার নিকট জমা দেয়া হলফনামায় এ চেয়ারম্যান প্রার্থী ‘স্বর্ণ’ নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তাতে যেন মূল্যহীন হয়ে উঠেছে এ ধাতু।

 

নির্বাচনে অংশ নেয়া রিয়াজ উদ্দিনের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় রিয়াজ উদ্দিনের কাছে হাতে নগদ ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৯২৯ টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৮০৮ টাকা। অর্থাৎ গত ১০ বছরে তার হাতে নগদ টাকা বেড়েছে ১০ গুনের বেশি। একই বছরে তার স্ত্রীর হাতে নগদ ছিল ১০ লাখ ১৭ হাজার ৫৬২ টাকা। এবার তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২৪ টাকা। অর্থাৎ তার স্ত্রীরও নগদ টাকা বেড়েছে সাড়ে চার গুনের বেশি।

 

এবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তিনি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৭ টাকা জমা রেখেছেন। বন্ড ও শেয়ার ক্রয় করেছেন ৪৫ হাজার ৬০০টি। যার মূল্য ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও তার নামে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬০ টাকার। স্ত্রী ও নির্ভরশীলসহ তার মোট কৃষি জমি রয়েছে ১ হাজার ৪০০ শতক। যার মোট মূল্য ১ কোটি ৪৯ লাখ ৫১৩ টাকা। তবে অকৃষি জমির পরিমান উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী ও তার জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। স্ত্রীর সহিত যৌথ মালিকানায় একটি বাড়ির মূল্য দেয়া আছে ১৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে পিপুলবাড়িয়া বাজারে একটি দ্বিতল বাড়ি রয়েছে। যার মূল্য ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৪ টাকা। স্ত্রী ও তার নামে ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যে রাজউকে কিনেছেন তিন কাঠা জমি।

 

এছাড়া গ্রান্ট জমজম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ছাড়াও তার রয়েছে সাতটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। একই সাথে তার নামে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকা অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা বিচারাধীন এবং দুনীতি দমন কমিশনে (দুদক) অর্থ পাচার আইনে দুটি মামলা তদন্তাধীন হলফনামায় দেখানো হয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে তার বিরুদ্ধে পাহাড় পরিমাণ অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুদক অনুসন্ধান করলে সব বেড়িয়ে আসবে। নির্বাচনে কালো টাকা ভোটারদের মাঝে ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

 

ভোট সুষ্ঠু হলে টানা তৃতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন আশা রেখে রিয়াজ উদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, যেকোনো প্রার্থীর অতীত কর্মকাণ্ড ও ব্যক্তিগত আচার-আচারণ দেখেই মানুষ ভোট দিবেন। আমি ২০১৪ ও ২০১৯ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলা পরিষদে সরকারি অনুদান ছাড়াও ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করেছি। এ জন্য তিনি এবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদী।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version