‘শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন নতুন করে ভাঙন দেখা দিলো তখন সবাইকে অনুরোধ করলাম কিছু জিওব্যাগ ফেলার জন্য। কিন্তু কেউই আমাদের কোন কথাই শুনলো না ও আমাদের শত অনুরোধেও কাজ হলো না। আজকে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে গেলো। এখন দোকান, বাড়ি ভাঙার পথে, বড় বড় ভাঙন চাপ নিচ্ছে। আমাদের কথা কেউ শোনে না। গত কয়েক দশকে আমরা সবাই ৪-৫ বার করে নদী ভাঙনে ভাঙতে ভাঙতে এখন নিঃস্ব। যাওয়ার কোন জায়গা নেই’- কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বললেন ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার অসহায় মোস্তফা শেখ।
এ রাস্তা দিয়েই চলাচল করে ৪ থেকে ৫০০ ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয় দেড়শত পরিবারের মানুষ। এদের অধিকাংশ লোক কয়েক ভাঙা দিয়ে এখানে এসেছে তারা সহায় সম্বলহীন। নদীতে সব চলে গেছে। অনেকেই আশায় আছে ঘাটে মহা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তাদের জমির টাকা নিয়ে তারা অন্যত্র বাড়ি ঘর করবে। কিন্তু দিনের পর দিন কোন কাজ হচ্ছে না। শুধু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি শুনতে শুনতে তারা আজ বড় অসহায় বলে জানান।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাটে বড় বড় ভাঙনের চাপ পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এলাকার চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি। ৫-৬ ফুট দুরেই একটি দোকান সরানোর কাজ করছে অনেকেই। ১০ গজ দূর থেকে প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি; যারা আতঙ্ক নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন ভাঙন এলাকায়। পদ্মা পাড়ে দাঁড়ানো মুখগুলো হাজারো দুঃশ্চিন্তা নিয়ে আগামীর প্রহর গুনছেন।
দোকান সরানোর কাজে ব্যস্ত আনোয়ার হোসেন বলেন, শুক্রবার যখন ভাঙন দেখা দিলো তখন বিআইডব্লিউটিএসহ ইউএনও, চেয়ারম্যান সবাই এসে এখানে জিওব্যাগ ফেলানোর কথা বললো কিন্তু তারা ফেললো না! এখন দোকানপাটসহ আমাদের বাড়িঘর ভাঙনে যাচ্ছে। তারা শুস্ক মৌসুমে কোন কিছুই করে না। স্রোতের সময় বস্তা ফেললে সেগুলো কোন কাজেই আসে না। আর তার হিসেবও থাকে না।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রয়োজনের সময় কোন কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ। তারা ৪-৫ দিন আগে যখন ভাঙন শুরু হলো তখন যদি পদক্ষেপ নিতো তাহলে আজ এই ভাঙনের মুখে পড়তে হতো না। মৃত মানুষের সামনে খাবার নিয়ে রেখে দিলে যেমন লাভ নেই তেমনি ভেঙে নিয়ে যাওয়ার পর জিওব্যাগ ফেলেও কোনো লাভ নেই। দিনের পর দিন ঘাট ভেঙে যাচ্ছে শত-শত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে। সরকারের কোন প্রকল্প এখানে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই প্রকল্পের জন্য ফাইল ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। চেয়ারম্যান দেশে ছিলেন না, আজ দেশে এসেছেন আমাদের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করে ফান্ডের ব্যবস্থা করবো।
জরুরি ফান্ডের ব্যাপারে বলেন, ২ বছর আগে আমরা জরুরি অবস্থায় কাজ করে সমন্বয় করে নিতাম কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত সেখানে কাজ করার। ইতিমধ্যেই আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথেই কথা বলেছি। ফান্ড পেলেই পরবর্তী কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু করা হবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য