-->
শিরোনাম
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্প

পাঁচ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ

ময়মনসিংহ ব্যুরো
পাঁচ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ
নদের বেশির ভাগ স্থানে পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর

ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে নেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছর মেয়াদি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের (২০২৪) জুন মাসে। তবে এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

 

প্রকল্পটির আওতায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজিং কাজ। প্রকল্পটির আওতায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের টোক থেকে জামালপুরের পোল্লাকান্দি পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটার অংশ খনন করার কথা। এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে, নদে শুষ্ক মৌসুমেও যেন ১০ ফুট পানি থাকে সে ব্যবস্থা করা হবে, আর নদের প্রশস্ততা বাড়ানো হবে অন্তত ৯০ মিটার। কাজ শেষ হলে এটি আন্তর্জাতিক নৌ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

 

শুরুতে কথা ছিল প্রথম দুই বছরেই শেষ করা হবে খননকাজ। এরপর তিন বছর প্রকল্পটি দেখভাল করা হবে। ময়মনসিংহবাসীও আশা করেছিল দুই-তিন বছরের মধ্যে প্রাণ ফিরে পাবে ব্রহ্মপুত্র নদ। তবে খননের বর্তমান অবস্থায় ময়মনসিংহবাসী হতাশ।

 

জানা গেছে, প্রকল্পের শুরু থেকে খননকাজ করতে গিয়ে ভাটির দিক থেকে উজানের দিকে এগিয়ে সংযোগস্থলে পৌঁছলে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হয়। জমি নিয়ে জটিলতায় সংযোগস্থলে কাজ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংযোগস্থলটি পড়েছে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গত বর্ষা মৌসুমে বলেছিলেন সংযোগস্থলের কিছু অংশ খনন করে চলতি বছর শুকনা মৌসুমে পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদে পানির প্রবাহ বাড়ানো হবে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।

 

এদিকে উজান থেকে পানি আসতে না পারায় খনন করা নদের স্থানে স্থানে আবারও ছোট-বড় চর জেগে উঠছে। অবশ্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, সংযোগস্থলের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। বিষয়টি নিয়ে গাইবান্ধা প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হচ্ছে।

 

সূত্র বলছে, খননকাজে ধীরগতির জন্য প্রথমত দায়ী করোনাকালের লকডাউন। এরপর কোথাও কোথাও বালি রাখা নিয়েও সমস্যা হয়। সর্বশেষ কারণ, সংযোগস্থলে খনন করতে এলাকাবাসীর বাধা দেওয়া।

 

বিষয়টি নিয়ে বিআইডাব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মহসীন মিয়া বলেন, ‘করোনাকালসহ বেশ কিছু কারণে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। সংযোগস্থলে স্থানীয়রা বাধা দেওয়ায় খননকাজে বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয়রা বলছেন, নদ তার গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সংযোগস্থলে খননকাজ হলে সেখানে ভাঙনেরও আশঙ্কা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করছি।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘ভরাট অংশ কিছুটা কেটে দিলে পানি ভাটিতে গেলে নদে চর জাগত না। যেসব স্থানে চর জেগেছে, সেসব স্থানে আবারও ড্রেজিং করা হবে। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে ময়মনসিংহবাসী সুফল পাবেন। বর্তমানে নদের ময়মনসিংহ-জামালপুর অংশে অর্ধশতাধিক ড্রেজার খননকাজ চলমান রয়েছে।’

 

প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের পুরো কাজের ২৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। সংযোগস্থলটি ধীরে ধীরে কাটতে হবে। এ বিষয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে।’

 

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের অনেক আশা। এই আশা যেন হতাশা সৃষ্টি না করে।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version