কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ভুট্টার খড় থেকে সাইলেজ তৈরি হচ্ছে যা থেকে অনেকাংশেই মিটবে গো খাদ্যের সংকট। এ উপলক্ষে সাইলেজ তৈরি বিষয়ক শিখন বিনিময় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউএসআইডি এর অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত সৌহার্দ্য-৩ প্লাস কর্মসূচি এর আয়োজন করে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ এর অধ্যাপক ড. একেএম আহসান কবির এর সার্বিক সহযোগিতায় ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ তৈরির পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৬মাস মেয়াদী পাইলট প্রকল্পের ফলাফল এবং শিখন বিনিময় করাই উক্ত কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। সৌহার্দ্য-৩ প্লাস কর্মসূচি সাইলেজ উৎপাদনের জন্য একজন অংশগ্রহণকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরী এবং উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করে। উৎপাদিত সাইলেজ মানসম্পন্ন ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় খামারীগণ তা ভালভাবে গ্রহণ করেছে। এই পদ্ধতিতে ভূট্টা গাছ হতে ভূট্টার দানা সংগ্রহ করার পর গাছের কান্ড ও পাতা দিয়ে সাইলেজ তৈরী করা হয়। যার ফলে একদিকে কৃষক যেমন উৎপাদিত ভূট্টা সংগ্রহ করে লাভবান হবে, অন্যদিকে পরিত্যক্ত ভূট্টার কান্ড ব্যবহারের ফলে পরিবেশ সহায়ক হবে।
এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত সাইলেজ মূল্য সাশ্রয়ী। এই খাদ্য সারাবছর ধরে যে কোন পরিস্থিতিতে গবাদী প্রাণির মান সম্মত আঁশ জাতীয় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে সারা বৎসর গবাদী প্রাণির স্বাস্থ্য ভাল থাকবে ও এর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কখামারীর আয় বৃদ্ধি পাবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত শিখন বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী, পশু সম্পদ বিভাগের কৃত্রিম প্রজনন উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ প্রধান, রাজারহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হৈমন্তি রাণী, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহাফুজুর রহমান, কেয়ার বাংলাদেশ এর কৃষি ও জীবিকায়ন প্রকল্পের টিম লিডার ড. হেদায়তুল ইসলাম, টেকনিক্যাল ম্যানেজার সুশিল কুমার দাস। এতে শতাধিক কৃষক ও খারামীরা অংশ নেয়।
সাইলেজ উৎপাদনকারী সোহরাব হোসেন বলেন, ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ উৎপাদন সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না। সৌহার্দ্য-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি দিধা-দন্দে পড়ে যাই। পরবর্তীতে তাদের আশ্বাস পেয়ে ঘর জায়গাসহ বিনিয়োগ করি এবং তাদের সহায়তায় বিভিন্ন উপকরণ পাই। অন্যদিকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ পেয়ে গতবছর ২শ কেজি সাইলেজ উৎপাদন করি। উৎপাদিত সাইলেজ বিভিন্ন খাদ্য বিক্রয়কারীর দোকানে প্রদানের মাধ্যমে ৩২ হাজার টাকা আয় করি এবং নিজের ৩টি গরুকে খাওয়ানোর ফলে গরু গুলোও হিষ্টপুষ্ট হয় যার ফলে আমি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হই। তাই আমি এবছর ৬শ কেজি সাইলেজ উৎপাদনের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করেছি। আমার কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে সাইলেজ সংগ্রহ করলে খামারীরা এবং ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ ডা. মো. মোনাক্কা আলী বলেন, দিন দিন গবাদী পশু পালনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গোখাদ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় ভূট্টার খড় দিয়ে সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে গোখাদ্যের ঘাটতি অনেকাংশেই কমে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ভূট্টা উঠার পর এর খড়গুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখন তা থেকে গো-খাদ্য তৈরি করা গেলে ভূট্টার পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে পারবে কৃষকরা।
কেয়ার বাংলাদেশ এর কৃষি ও জীবিকায়ন প্রকল্পের টিম লিডার ড. হেদায়তুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামে প্রায় ৪ শতাধিক চর রয়েছে এসব চরে প্রচুর পরিমাণে ভূট্টা চাষ ও গবাদী পশু পালন করা হয়। এসব চরে গোখাদ্যেরও অনেক চাহিদা রয়েছে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় চরা লগুলোতে ভূট্টার খড় থেকে সাইলেজ উৎপাদন ছড়িয়ে দেয়া গেলে একদিকে যেমন গোখাদ্যের সংকট মিটানো সম্ভব হবে তেমনি বাড়তি আয় করতে পারবেন কৃষকরা।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য