কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চাপিতলা ইউনিয়নের চাপিতলা-বিষ্ণুপুর সড়কের পাশের সরকারি খালটি খননের নামে ইটভাটায় মাটি বিক্রি ও হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। খাল খননের মাটি খালের দুই পাড় বাঁধাই করে উদ্ধৃত মাটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার বিধি থাকলেও খাল খননের শুরু থেকে স্থানীয় আয়েশা ব্রিকসসহ বিভিন্ন ইটভাটায় খালের মাটি বিক্রি করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তবে প্রকাশ্যে নিলামে মাটি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে বলে মুরাদনগর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করা হলে প্রকাশ পায় খাল খনন প্রকল্পের নামে হরিলুট করার রহস্য। তাছাড়া খাল কাটারস্থলে প্রকাশ্যে নিলাম হয়েছে বলা হলেও এই নিলামের বিষয়ে কিছুই জানেন না ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয়রা। খাল খনন কাজ শুরু হওয়ার পূর্বে কিভাবে প্রশাসন মাটি নিলামে বিক্রি করেন! এই নিয়ে জনমনে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। রহস্যময় নামমাত্র মূল্যে নিলাম করে সরকারকে কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, সারাদেশের খাল ও পুকুর উন্নয়নের আওতায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলা ইউনিয়নের চাপিতলা-বিষ্ণুপুর সড়কের পাশের খালটির সাড়ে তিন কিলোমিটার খনন প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্দ প্রদান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। যার বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয় ১ কোটি টাকা। কোটি টাকার এই খাল খনন কাজটি পায় সোলায়মান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মার্চ মাস থেকে খালের পশ্চিম অংশ থেকে খনন কাজ শুরু করে ঠিকাদার।
স্থানীয়রা জানান, খালের মাটি বিক্রির পাশাপাশি খালের পাশে সরকারি বরাদ্দে নির্মাণ করার রাস্তার মাটিও কেটে নিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। ব্রিজের গোড়া থেকে অবাধে মাটি কেটে নেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের চাপিতলা ব্রিজটি। এদিকে নিয়ম না মেনে খাল খননের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চাপিতলা-বিষ্ণুপুর পাকা সড়কসহ খালের পাড়ের অনেক বসতবাড়ি। যেকোন সময় খাল ধসে পড়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এছাড়াও প্রতিদিন শতশত ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের কারণে সড়কে যানচলাচল ব্যহত হওয়ায় এলাকাবাসীও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জসিম উদ্দীন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, রাত হতেই শুরু হয়ে যায় এই মাটিকাটার তান্ডব, এলাকায় আমরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। রাস্তা-ঘাটে অনেক ধুলা-বালি যাতে দম বন্ধ হয়ে আসে। খালের পাশের রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো ভাঙবে। ভেকু দিয়ে যে খালের পাড় বাধা হয়েছে তা এক বৃষ্টিতেই রাস্তা সহ ভেঙে যাবে, এগুলো টিকবে না।
এ বিষয়ে বিষয়ে চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মুছা আল কবির বলেন, খাল খননের কাজটি দেখেছি কিন্তু উন্মুক্ত নিলাম কবে বা কিভাবে হয়েছে আমি এবং আমার পরিষদের মেম্বাররা কিছুই জানি না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোলায়মান এন্টারপ্রাইজের মালিক সোলায়মান মিয়া বলেন, অফিসিয়ালি যেভাবে আছে আমরা সেভাবেই কাজ করছি। ব্যতিক্রম কোনকিছু করার চিন্তাভাবনা আমাদের নেই।
মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রায়হানুল আলম চৌধুরী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ইউএনও ও আমাদের দপ্তরের উপস্থিতিতে স্পট নিলাম করা হয়। কাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন অভিযোগে আমরা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাদের কাজে যেসকল সমস্যা আছে তা আমরা চিহ্নিত করে তাদেরকে সমাধান করার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছি।
মুরাদনগর ইউএনও সিফাত উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি কোনো লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি যে সকল প্রতিষ্ঠান এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে তাদের কাছ থেকে সু-নির্দিষ্ট সমাধান পাবো।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য