-->
শিরোনাম

হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়ে ৫০০ গুণ

সিলেট ব্যুরো
হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়ে ৫০০ গুণ
ক্যাপশন: নতুন নির্ধারিত গৃহকরের নোটিস পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভবন মালিকেরা

সিলেট নগরীতে গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড চলছে। সিটি করর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন পর পঞ্চবার্ষিক পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন গৃহকর নির্ধারণ করেছে। তবে ভবন মালিকরা নতুন নির্ধারিত গৃহকরের নোটিস পেয়েই ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা বলছেন, সিটি করর্পোরেশন অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিকহারে কর বৃদ্ধি করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ গুণ পর্যন্ত কর বাড়ানো হয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

 

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই শত শত লোক গৃহকরের ব্যাপারে তাদের লিখিত আপত্তি সিটি করর্পোরেশনে জমা দিচ্ছেন। সিলেট সিটি করর্পোরেশন (সিসিক) ৩০ এপ্রিল থেকে নতুন নির্ধারিত গৃহকর পরিশোধের জন্য ভবন মালিকদের নোটিস দেওয়া শুরু করে। পাশাপাশি কর আদায় এবং এ ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে জানানোর জন্য বিশেষ সেবা কার্যক্রম চালু করেছে। সিসিক প্রাঙ্গণে বুথ স্থাপন করে এই কার্যক্রম চলছে।

 

অস্বাভাবিক হারে করবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন ইতিমধ্যে সোচ্চার হয়েছে। জেলা ও মহানগর বিএনপি পৃথক বিবৃতি দিয়ে গৃহকর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক দাবি করে বলেছে, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় অযৌক্তিকভাবে গৃহকর বাড়ানো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো। তাই অস্বাভাবিক হারে করবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।’

 

গৃহকর বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদের আহ্বানে সোমবার রাতে নাগরিক সভা হয়। ওই সভায়ও বক্তারা করবৃদ্ধির হারকে অস্বাভাবিক দাবি করে তা যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। বাসদের উদ্যোগেও ইতিমধ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। ‘দুর্নীতিমুক্তকরণ ফোরাম’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনও সোমবার এ ব্যাপারে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।

 

সিসিকের গৃহকর আদায় ও আপত্তি গ্রহণ বুথগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই সেখানে মানুষের দীর্ঘ সারি। প্রায় সবাই নতুন নির্ধারিত গৃহকরকে অস্বাভাবিক দাবি করে বলেন, এই করের বোঝা তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই গৃহকরকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।

 

নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবেল মিয়া তার দুটি স্থাপনার জন্য নতুন নির্ধারিত গৃহকরের ব্যাপারে লিখিত আপত্তি জমা দিয়ে বলেন, ‘আমার একটি একতলা আবাসিক ঘর ও একটি দোকানঘর রয়েছে। আগে আবাসিক ঘরের জন্য বছরে ৫০০ টাকা এবং দোকান ঘরের জন্য বছরে ৮০০ টাকা কর দিয়েছি। এখন আবাসিক ঘরের জন্য ৮ হাজার টাকা ও দোকান ঘরের জন্য ১৮ হাজার টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আমার পক্ষে কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়।’

 

খালেদ আহমদ নামের আরেকজন জানান, তিনি আগে ৯৪৪ টাকা কর দিতেন। এখন তার জন্য ১৬ হাজার টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

অবশ্য সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, কারও কাছে কর বেশি মনে হলে লিখিতভাবে আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি যাচাই করে কর পুননির্ধারণ করা হবে। এছাড়া বর্তমানে আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্সের অ্যাসেসমেন্ট (জরিপ) সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্বে থাকাকালে করা হয়েছে। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আগের অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতেই নতুন হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন।

 

এ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য দুই ধরনের অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। একটি জেনারেল অ্যাসেসমেন্ট, যা ৫ বছর পর পর করার কথা। আরেকটি প্রতি বছর করে থাকে সিটি করর্পোরেশনের রাজস্ব শাখা। তবে ২০০২ সালে সিটি করর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন জেনারেল অ্যাসেসমেন্ট হয়নি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্সের জেনারেল অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন করেন। ওই অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত গৃহকর বর্তমান পরিষদ কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘদিন পর অ্যাসেসমেন্ট করে নতুন হারে গৃহকর নির্ধারণ করায় অনেকের কাছে তা বেশি মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘ বিরতির কারণেই এটা হয়েছে। এতদিন যে হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়া হয়েছে তা ছিল অনেক ক্ষেত্রে অবাস্তব ও নামমাত্র।

 

এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসী ভোট দিয়ে আমাকে তাদের সেবা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি নগর উন্নয়ন ও নগরবাসীর সেবা করতে চাই। তবে উন্নয়নের জন্য নাগরিকদের দেওয়া কর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version