গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী বাজারসংলগ্ন শিতলক্ষা নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে। এতে প্রায় এগারো দিন ধরে বরমী-কুরিয়াদি খেয়া ঘাটে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে দু’একটি নৌকা চলতে গেলেও আটকে যায় মাঝ নধীতে। রশি বেঁধে এসব নৌকা উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এছাড়া নদীতে বন্ধ রয়েছে প্রায় সব ধরণের নৌযান চলাচল। খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নসহ আশ পাশের প্রায় বিশ গ্রামবাসী। প্রতি দিন তাদের প্রায় বিশ কিলোমিটার পথ অটোরিক্সায় পারি দিতে হয়। গুনতে হচ্ছে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০টাকা ভাড়া।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দু’মাস ধরে শীতলক্ষা নদীতে কচুরি পানার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। থেমে থেমে নদীতে চলতো নৌযান। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে কচুরিপানার চাপ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক নৌকা-ট্রলার চলাচল করতে পারে না। অতি শক্তিশালী ইঞ্জিনযুক্ত দু’একটি ট্রলার ধীরগতিতে চলতে পারে। খেয়া পারাপাড় বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে পরেছেন ঘাটের দু’পাশের ব্যবসায়ীরা। কর্মহীন হয়ে পরেছে নৌকার মাঝি। সিংহশ্রী ব্রিজের নিচ থেকে বরমী ঘাট পযর্ন্ত নদীপথ পার হতে প্রায় ১৫-২০ লিটার জ্বালনি প্রয়োজন হয়। সময় লেগে যায় দুই-তিন ঘণ্টা।
স্থানীয়রা আরো জানান, এ ঘাট দিয়ে পার্শবর্তি কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নসহ আশপাশের অন্তত্য বিশ গ্রামের মানুষ নদী পার হয়ে থাকেন। প্রতিদিন প্রায় ছয় শতাধিক ছাত্রছাত্রী, পাঁচশতাধিক শ্রমিকসহ হাজার হাজার ব্যবসায়ী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নদী পার হয়ে থাকেন। খেয়া বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের বরমী বাজার বা কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পার হয়ে। এখন তারা পরেছেন চরম বিপাকে।
ঘাটের ব্যবসায়ী আলম জানান, গত দুই বছর ধরে নদীতে কচুরিপানার চাপ দেখা যাচ্ছে। এ বছর খুব বেশি। কোনো নৌকাই নদী দিয়ে চলতে পারছে না। দু’একটি নৌকা যাত্রী পাড় করতে গিয়ে মাঝ নদীতে অটকে পরে। পরে এসব নৌকা রশি বেঁধে পারে আনা হয়। বরমী পারের ঘাটে যাত্রী না থাকায় আমাদের দিন চলে বসে থেকে। প্রতিদিনের দোকান খরচ চলে না।
খেয়া ঘাটের ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, খেয়া বন্ধ থাকায় আমরা ঘাটের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পরেছি।
কুরিয়াদী পারের ব্যবসায়ী মোরর্শেদ বলেন, খেয়া নৌকা বন্ধ থাকায় আমরা দুই পারের মানুষ ভোগান্তিতে পরেছি। সোমবার রাতে একটি মালবাহী ট্রলার নদীতে অটকা পরে। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে ট্রলারটি উদ্ধার হয়।
বরমী বাজারের অটোরিকশাচালক মোজাম্মেল হক জানান, খেয়াঘাটে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে অটোর যাত্রী বেড়ে গেছে। বরমী থেকে কুরিয়াদি পর্যন্ত যেতে প্রায় বিশ কিলোমিটার পথ পার হতেহয়। এতে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট সময় লাগে। যাত্রী প্রতি ভাড়া নিয়ে থাকেন ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা।
বরমী-কুরিয়াদি খেয়াঘাটের ইজারাদার তৌফিক হাসান জানান, গত বছরও কচুরির কারণে খোয়া নৌকা বন্ধ ছিল। এবারো নদীতে কচুরিপানার চাপ অনেক বেশি। গত এগারো দিন ধরে খেয়া নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে অবহিত করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এখন তাকে লোকশান গুণতে হচ্ছে। নয়টি খেয়া নৌকার মাঝিকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা ভাতা দিতে হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেস বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না। এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘব হতো। ইউএনও শোভন রাংসা জানান, খেয়া ঘাটের বিষয় দেখবে জেলা পরিষদ। এ বিষয়ে জেলা পরিষদ ব্যবস্থা নিবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গাজীপুর জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোদাচ্ছের আলীকে মোবাইল ফেনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য