-->
শিরোনাম

দলীয় বিরোধে পদত্যাগের ঘোষণা এমপি শান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক
দলীয় বিরোধে পদত্যাগের ঘোষণা এমপি শান্তর
 
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত নিজের আগাম ইস্তফার ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় বিরোধের জের ধরে সোমবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। গত সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে বিতর্ক তুলে বক্তব্যের জেরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুসের বিচার চেয়ে নিজের ইস্তফার ঘোষণা দেন এ এমপি। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
 
 
ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ময়মনসিংহ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। সেখানে বক্তব্য দিতে শোনা যায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুসকে।
 
 
তিনি বলেন, ‘আমিনুল হক শামীম (জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি) বিগত নির্বাচনে তিন মাস কাজ করে সদরের প্রতিটি প্রান্তে প্রতিটি ঘরে নেতা হিসেবে পরিচয় লাভ করেছেন। আপনারা গত নির্বাচনে ট্রাক মার্কাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। আমিনুল হক শামীম ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন; কিন্তু বিকেলে অদৃশ্য হাতের ইশারায় তাঁকে ফেল করানো হয়েছে। ১ লাখ ৩ হাজার ভোট, এটি বাড়ির কাছের কথা নয়। ৫০ হাজার ভোট এদিক-সেদিক করে ফেলছে, না হলে এই ভদ্রলোক (আমিনুল হক শামীম) পাস করেন।’
 
 
অন্য একটি ভিডিওতে এম এ কুদ্দুস বলেন, ‘ঘোড়া প্রতীক (উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী আশরাফ হোসাইন) নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, তাঁর জন্য আজকে আপনাদের সামনে আমরা কথা বলতে এসেছি। সদর উপজেলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এখানে চোর, ডাকাত, খুনিরা নির্বাচিত হোক– এটি আমরা চাই না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সমাজের চিহ্নিত খারাপ লোক, তারা যেন হতে না পারে তার জন্যই আমরা আশরাফের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।’ 
 
 
নিজের বক্তব্যের বিষয়ে এম এ কুদ্দুসকে সোমবার সকাল থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। একবার ফোন রিসিভ করলেও এ প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর ফোন কেটে দেন তিনি।
 
 
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের স্ট্যাটাসে সদর আসনের এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত লেখেন, ‘গোটা পৃথিবী যেখানে আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভের পর সবাই যখন আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আপনার সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ তখন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সন্তানের রক্তের সঙ্গে আপস করা, সন্তানের খুনিদের সঙ্গে আপস করা এম এ কুদ্দুস সেই অবাধ, সুষ্ঠু আর নিরপেক্ষ নির্বাচনকে, আমাদের প্রাণপ্রিয় আপনাকে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাকস্বাধীনতার অর্থ মিথ্যাচার হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমি অগ্রিম ইস্তফা দিয়ে রাখলাম। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে আপনি হয় আমার ইস্তফা গ্রহণ করবেন এবং জড়িত প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করবেন, না হয় ব্যক্তিস্বার্থে বিরোধীদের হাতে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার খোরাক তুলে দেওয়ার জন্য এম এ কুদ্দুসের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করবেন।’
 
 
আগামী ২১ মে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে শনিবার নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আশরাফ হোসাইনের সমর্থনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিগত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত জাহান মুকুল, দপ্তর সম্পাদক আবু সাঈদ বিন ইসলাম ফখরুলসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। 
 
 
স্থানীয় নেতাকর্মী জানান, ময়মনসিংহ জেলা সদরের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি পক্ষ বর্তমান এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত এবং অপর পক্ষ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও তাঁর বড় ভাই আমিনুল হক শামীমের নিয়ন্ত্রণে। দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ পুরোনো হলেও তা অনেকটা স্তিমিত ছিল। কিন্তু গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শান্তর বিপক্ষে শামীম নির্বাচন করায় বিরোধ সামনে আসে। এখন উপজেলা নির্বাচনে এমপির লোকজন কাজ করছে কোতোয়ালি যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিরতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদের পক্ষে এবং শামীমের লোকজন আশরাফ হোসাইনের পক্ষে। 
 
 
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত জাহান মুকুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে এমপি যেভাবে লিখেছেন– এটি ঠিক হয়নি। বক্তৃতায় দাঁড়ালে অনেক কিছুই বলা হয়; কিন্তু সবকিছু কি ধরা যায়? একজন নেতা বক্তৃতায় বলতেই পারেন, এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি না। 
 
 
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক আহমেদ খান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারেন না। এ ধরনের বক্তব্য বিএনপি দিয়ে থাকে। এর পর দল করার নৈতিক অধিকার তাঁর (কুদ্দুসের) আর নেই।
 
 
ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version