রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের মুকুল এসেছিল দেরিতে। ছিল অব্যাহত তাপপ্রবাহ ও পোকার উপদ্রব। এ কারণে আম এবার কম হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। আর এই দাবিকে সক্রিয় হয়ে উঠছে দাম বাড়ানোর একটি সিন্ডিকেট। এবার আমের দাম গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে ধারণা আমের বাগান-মালিক ও চাষির।
কৃষি বিভাগ বলছেন, মুকুল দেরিতে আসলেও আমের উৎপাদন এবারও কমছে না। গেল বছরের মতো এবারও আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমের আকারও বড় হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ ও ফল গবেষকরা বলছেন, কিছু গুটি ঝরেছে তা স্বাভাবিক। প্রতিবছর কিছু গুটি আম ঝরে যায়। যেগুলো টিকে ছিল তা ভালোভাবে পরিচর্যা করা হয়েছে। চাষিদের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। আম চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে ঘন পদ্ধতিতে আম চাষ করছেন। এতে তারা লাভবানও হচ্ছেন। কারণ ছোট গাছগুলোয় প্রতি বছরই ভালো আম ধরে এবং গুটি ঝরে পড়ে না। তাছাড়া আম চষিরা এসব গাছ ঠিকভাবে পরিচর্যাও করতে পারেন।
আম চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এমনিতেই রাজশাহীতে গাছে আম এসেছে কম। শুরুতে আমের গুটি ঝরে গেছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। লাভ তুলতে হলে আমের দাম বাড়বে। আমের পরিচর্যা করতে তাদের খরচ বেশি হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমির আম গাছে ফলন এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন আম। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ টন আম উৎপাদন হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। তবে ঝড়ের কবলে না পড়লে এ আম দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবারেও একই ছিল লক্ষ্যমাত্রা।
রাজশাহী-চাঁপাই ফুড অ্যগ্রো প্রডিউসারের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আম নামানো শুরু করেছি। বুধবার অল্প সংখ্যক আম নামানো হয়েছে। এই আম পাকতে আরও সময় লাগবে। গোপালভোগ ও হিমাসাগরের মধ্যে দিয়ে আম বিক্রি জমে উঠবে। আম চাষিদের ভাষ্য, জ্যৈষ্ঠের শেষভাগে অর্থাৎ আরও ২৫ দিন পর থেকে মিলবে পুষ্ট ও পোক্ত রসালো আম। ভালো আম পেতে ক্রেতাদের হতে হবে আম ক্যালেন্ডার সম্পর্কে সচেতন।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় গাছে আম কম থাকলেও কৃষি বিভাগের হিসাব বলছে, গতবছরের চেয়ে এ বছর আম উৎপাদন হবে বেশি। কারণ এ বছর হয়নি কালবৈশাখী ঝড়।
নগরীর সাহেববাজার এলাকার ফল বিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, আম নামানো কেবল শুরু হয়েছে। গুটি জাতের এই আম সেভাবে কেউ খেতে চায় না। তাই বাজারে আম উঠেনি। গোপালভোগ-হিমসাগর আসলে তা চাহিদা বাড়বে। তখন থেকে আমের দাম নির্ধারণ করা হবে। পুঠিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট বানেশ্বরে সেভাবে আম দেখা যায়নি। কয়েকজন আম বিক্রেতা আম বিক্রি করছেন। তবে গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।
রাজশাহীর চারঘাট থেকে হাটে আম বিক্রি করতে এসেছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতবছর গুটিজাতের এই আম ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। এবার এই আম বিক্রি হবে ৫০ টাকা কেজি দরে। যা মণের হিসাবে দুই হাজার টাকা।
বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে চাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিতে বলছেন তারা। প্রশাসন কঠোর হলে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করার সুযোগ পাবেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এর আগে গত রোববার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। সেখানেও এবারের আমের দাম নিয়ে কথা উঠে।
১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া যাবে, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ, ৩০ মে থেকে খিরসাপাত, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ, আগামী ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম ৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আর ২০ আগস্ট থেকে পরিপক্ব ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারাবছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর আম বিখ্যাত। কোনো অসাধু ব্যক্তি, আমের দাম না বাড়াতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখব। আমাদের একাধিক টিম কাজও করবে। ইতোমধ্যে কেউ সময়ের আগে আম নামাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য