গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কাজলডোপ,ছাটকাজলডোপ, নারায়ণপুর, ছোট নারায়ণপুর, খোলাবাড়ি ও উত্তর নারায়ণপুর গ্রাম।
ওপারে কুপতলা ইউনিয়নের দুর্গাপুর, পশ্চিম দুর্গাপুর, চাপাদহ, পশ্চিম কুপতলা, ধর্মপুর ও বেড়াডাঙ্গা গ্রাম। মাঝখানে প্রবাহিত ঘাঘট নদ। এই এলাকায় ঘাঘট নদের ওপর সেতু নেই। দীর্ঘদিন দাবি জানিয়েও এখানে সেতু হয়নি। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নদের ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। দুই ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা সাঁকোটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পারাপার হতে হচ্ছে। কারণ, জেলা শহরে বিকল্প পথে ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতেদুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বল্লমঝাড় ও কুপতলা ইউনিয়নের ১১ গ্রামের মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে বল্লমঝাড় ও কুপতলা ইউনিয়নের মধ্যে নৌকায় যোগাযোগ চালু ছিল। ২০১৮ সালে দুই ইউনিয়নের লোকজন ঘাঘট নদের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ শুরু করে। কেউ টাকা, কেউ বাঁশ, কেউ কাঠ, রশি দিয়ে সহায়তা করে। এতে খরচ হয় মোট প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এরপর গত প্রায় পাঁচ বছরে সাঁকোটি আর মেরামত করা হয়নি। গত বছর ধরে সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে সাঁকোর অনেক বাঁশের খুঁটির নিচের অংশ পানিতে নষ্ট হয়েছে। অনেক স্থানে পাটাতনের বাঁশ খুলে গেছে। দুই তিনজন মানুষ একসঙ্গে উঠলে সাঁকোটি দোল খায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে কাজলঢোপ গ্রাম। পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত ঘাঘট নদ। নদে সামান্য স্রোতে বাঁশের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। কয়েকজন উঠলেই সাঁকোটি দোল খাচ্ছে। কেউ মালামাল মাথায় নিয়ে, কেউ বাইসাইকেল, কেউবা মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে সাঁকো দিয়ে নদী পাড় হচ্ছেন। অনেকে হেঁটে পারাপার হতেও ভয় পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ না থাকা রাতে পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উভয় পাশে কাঁচা সড়ক। সাঁকো ছাড়া এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে যাতায়াত করতে ঘুরে যেতে হয় ৪ কিলোমিটার পথ। অটোরিকশা-ভ্যান পারাপারের সুযোগ নেই। ফলে দুই ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের প্রায় এক লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দুই ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে কাজলঢোপ এলাকা সাঁকো দিয়ে নদ পারাপার হচ্ছে।
পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের হায়দার আলী (৫০)। পেশায় তিনি অটোরিকশা চালক। ১ ছেলে-২ মেয়ে ও স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। যা পুঁজি ছিলো তা দিয়ে অটোরিকশা কিনেছেন। রোজগারের জন্য প্রতিদিন জেলা শহরে আসতে হয়।
হায়দার আলী বলেন, দূর্গাপুর থেকে কাজলঢোপ হয়ে শহরের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। কিন্তু বাড়ির সামনে বহমান ঘাঘট নদ। কাজলঢোপ এলাকায় নদীর ওপর সেতু নেই। বর্ষায় নৌকা, শুকনায় বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হতে হয়। সাঁকো দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে পারাপার হওয়া যায়না। চাপাদহ এলাকা হয়ে ৪ কিলোমিটার ঘুরে শহরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয় হচ্ছে, সেতু হলে এ সমস্যা থাকত না। এখন সাঁকোতে লোক পারাপার হলেও সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হায়দার আলীর মতো অটোরিকশা চালক সুজন মিয়া, রবিউল ও অব্দুর রশিদ জানালেন সাঁকো দিয়ে পারাপারের দুর্ভোগের কথা ।
গাইবান্ধা কৃষি ডিপ্লোমাতে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ুয়া শারমিন আকতার বলেন, দুর্গাপুর গ্রাম থেকে শুক্রবার ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই যেতে হয় শহরে। এ রাস্তাটাই একমাত্র সর্টকাট। সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পারাপার হতে হচ্ছে। কারণ, জেলা শহে বিকল্প পথে ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। তাতে সময় ও পরিবহন খরচ দুটোই বেশি লাগে। একই এলাকার আরেক অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী যুথী আক্তার বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পাড় হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হচ্ছে। এখানে সেতু খুবই দরকার।
এব্যাপারে গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. বাবলু মিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, কাজলঢোপ এলাকায় ঘাঘট নদের ওপর সেতু নির্মাণের একটি প্রস্তাবনা সদর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেতুটি নির্মাণ করা হলে দুই পাড়ের লাখো মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে, সেই সাথে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিও হবে। মানুষগুলোও পাবে নাগরিক সুবিধা। তাই এলাকাবাসীর দাবী সেতুটি নির্মাণ করা হোক।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য