তরমুজ মৌসুমি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। এখন মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসেও সুস্বাদু এই ফল বাজারে পাওয়া যাবে। হাকিমপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো এবার অসময়ের তরমুজ চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন সোহেল রানা নামের এক যুবক। তাকে দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
সোহেল রানা (৩৫) উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মৃত তোসাদ্দেক হোসেনের ছেলে। সোহেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউটিউব দেখে বাড়ির পাশের পৌনে দুই বিঘা জমিতে মাচা তৈরি করে অসময়ের তিন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এর মধ্যে একটি হলুদ, আরেকটি কালো এবং তৃতীয়টি সবুজ বর্ণের। ধানের চেয়ে তরজুম চাষ লাভজনক হওয়ায় সামনের দিনে বৃহৎ পরিসরে চাষ করবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে মাচান পদ্ধতিতে তিন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন সোহেল। এখন মাচায় ঝুলছে হলুদ, কালো এবং সবুজ বর্ণের ফলন। সেগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামের কৃষকরা চাষ পদ্ধতি দেখতে আসছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন। আগামীতে চাষের কথা জানিয়েছেন তারা।
প্রথমবারেই ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘আমি গ্রামের এক মসজিদে ইমামতি করি। পাশাপাশি অন্য কিছু করার চিন্তা থেকে ইউটিউবে তরমুজ চাষ দেখে আগ্রহী হই। বাড়ির পাশের পৌনে দুই বিঘা জমিতে মাচা তৈরি করে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করেছি। গাছগুলোতে ফল ধরেছে। ফলের ভারে মাচা ছিঁড়ে পড়ার অবস্থা। তাই মাচা ঠিক করছি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারজাত করতে পারবো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো আয় হবে বলে আশা করছি।’
চাষাবাদে এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘গাছে যে ফলন আছে, তাতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো। হলুদ ও সবুজ তরমুজের কেজি ৩০-৪০ এবং কালোটার ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই বাজার দর থাকলে ভালো আয় হবে। এক বিঘায় ধান চাষ করে লাভ হয় সর্বোচ্চ ছয়-সাত হাজার টাকা। বিপরীতে তরমুজ চাষে লাখ টাকার ওপরে লাভ হয়। আগামীতে বড় পরিসরে চাষাবাদ করবো।’
প্রতিদিন চাষ পদ্ধতি দেখতে কৃষকরা আসছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুজন পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। আগামীতে এই অঞ্চলে চাষাবাদ আরও বাড়বে।’
রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর জমিতে ধান চাষ করে আসছি। ওই জমিতে সোহেল রানা তরমুজ চাষ শুরু করে সফল হয়েছেন। যেভাবে তার ক্ষেতে ফল ধরেছে তাতে ভালো আয় হবে। কথা বলে জেনেছি, ধানের চেয়ে তরমুজ চাষ লাভজনক। এজন্য তার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি। আগামীতে আমিও কয়েক ধরনের তরমুজ চাষ করবো।’
সোহেল রানার ক্ষেতে কর্মরত শ্রমিক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সোহেল রানা তরমুজ চাষ করায় আমার মতো ১০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা ক্ষেতের পরিচর্যা, তরমুজে জালি পরানোসহ সব কাজ করছি। যে হারে গাছে ফল ধরেছে, তাতে বেশ ভালো ফলন হবে।’
উপজেলায় প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ হয়েছে জানিয়ে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, ‘এখানে প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। তাদের মাঝে তরমুজের যে জাতগুলোর বীজ বিতরণ করেছি, সেগুলো উচ্চফলনশীল। অসময়ে চাষ করা যায়। এখন পর্যন্ত মাঠের যে পর্যবেক্ষণ তাতে করে গাছ যেমন সুন্দর হয়েছে তেমনি ফলন বেশ ভালো হয়েছে। দু’তিন কৃষক চাষ করেছেন। বেলে মাটিতে তরমুজ চাষ হয়। এখানের মাটি চাষের উপযোগী। দাম ভালো পেলে আগামীতে আবাদ বাড়বে। সেইসঙ্গে চাষাবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য