-->
শিরোনাম

সীতাকুণ্ডে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বর্জ্য শোধনাগার

হুমকিতে পড়বে জনস্বাস্থ্য

মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন. সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
সীতাকুণ্ডে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বর্জ্য শোধনাগার
ক্যাপশন : সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বর্জ্য শোধনাগার

সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের পাদদেশে মৌলভী পাড়ায় তিন ফসলি কৃষি জমির উপর গড়ে উঠছে বর্জ্য শোধনাগার। টিএসডিএফ (ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ডিসপোজল ফ্যাসিলিটি) প্রকল্পের আওতায় পুরোনো জাহাজ ভাঙ্গা ও কল-কারখানার বিপদজনক বর্জ্যে শোধনাগারটি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত মৌলভীপাড়ার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ওই এলাকার তিন ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে সীমানা পিলার। বর্জ্য শোধনাগারে ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকা‘সহ আশ-পাশে ছড়িয়ে পড়বে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়, হুমকিতে পড়বে জনস্বাস্থ্য, জীব-বৈচিত্র্য ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন।

 

প্রকল্পটির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে স্থানীয় জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি, কৃষি-পর্যটক সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সন্নিকটে অবস্থিত মৌলভীপাড়া এলাকাটির উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ মন্দির আর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬ একর আয়তনের সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। বিশাল এ পার্কে রয়েছে ফলজ. বনজ, নান্দনিক ও ঔষধি ৮৩০ প্রজাতির বৃক্ষরাজি এবং তিন শতাধিক প্রজাতির প্রাণী। আর পাহাড়ের সমতল এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছে কয়েকশ’ আদিবাসী জনগোষ্টি।

 

ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পটি কৃষি ও পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে যেমন মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে তেমনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান সীতাকুণ্ডে শিবচতুদর্শী মেলায় প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীদের চন্দ্রনাথ মন্দিরে অবস্থান ও স্বাভাবিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদী পালনে সৃষ্টি করবে প্রতিবন্ধকতা। মৌলভী পাড়ার বাসিন্দা মোঃ সেলিম হায়দার বলেন পুরাতন জাহাজের বর্জ্য রিসাইক্লিং কাজের জন্য শোধনাগারটি এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। পৌরসভা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন দাশ রকি বলেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ’ হবে সীতাকুণ্ড পৌরবাসী‘সহ চন্দ্রনাথ মন্দিরে আগত তীর্থযাত্রীরা।

 

সীতাকুণ্ড আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবুল হাসান সাহাব উদ্দিন বলেন পৌরসভার শস্যভান্ডার খ্যাত ওই এলাকার তিন ফসলি জমির ফসল‘সহ কৃষি ও পর্যটন শিল্পে মারাত্মক প্রভাব পড়বে এ ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। স্থানীয় বর্গাচাষী মোহসিন আলম বলেন পারিবারিক কিংবা নিজস্ব কৃষি জমি না থাকলেও পাহাড়ি পলি মাটিতে উর্বর এ এলাকায় অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে উৎপাদিত ফসল বিক্রির অর্থে সংসার পরিচালনা করে আসছি। পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন বলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশের্^ পšি’ছিলা ও শেখ পাড়ার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত পৌরসভার ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় ও কসাইখানাটি পৌরবাসীদের মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে পড়েছে। ৯টি ওয়ার্ডের নিক্ষিপ্ত আবর্জনা প্রতিদিন ভোরে ড্রাম্প ট্রাকের মাধ্যমে এ ভাগাড়ে নিয়মিত অপসারণ করায় আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জনসাধারণের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

 

বাতাসের গতি বাড়লে দুর্গন্ধ আশ-পাশের বাড়ি-ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। পৌরসভা ছাড়াও রাতের অন্ধকারে দুর-দুরান্ত থেকে বর্জ্য এনে সেখানে নিক্ষেপ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। অতিষ্ঠ পৌরবাসীদের সাথে আমিও দীর্ঘনি যাবৎ ভাগাড় ও কসাইখানাটি অন্যত্র সুবিধাজনক স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দাবী জানিয়ে আসলেও তা আজও আলোর মূখ দেখেনি। আমরা চাই না পৌরএলাকায় বর্জ্য শোধনাগারের নামে আরো একটি জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হউক। সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন প্রকল্পটি পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য ক্ষতিকারক হওয়ার বিষয়টি শিল্প মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সাংসদ’কে লিখিত ভাবে অবহিত করেছি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version