-->
শিরোনাম

তাড়াশে বস্তায় আদা চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক বাহারাম

মাসুদ রানা. সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
তাড়াশে বস্তায় আদা চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক বাহারাম
ক্যাপশন: কৃষক বাহারাম ২৫শত বস্তায় আদা চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন।

এক সময় গ্রামের কৃষক আদা চাষ করতেন উঁচু জমিতে। আদা চাষের জমিকে উর্বর করে তুলতে গবর সার ও চুলার ছাই দিয়ে লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করা হতো। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেলে আদার বীজবপন করতো কৃষক কৃষাণী। অঙ্কুর বের হওয়ার পর লাইন করে মাটি উঁচু করতে হতো। সেই পদ্ধতিতে কৃষকের পরিশ্রম হত অনেক।

কিন্তু বর্তমানে আধুনিক ও ডিজিটাল যুগে এসে সেই চাষাবাদ সহজ হয়ে গেছে। আদা এখন চাষ হচ্ছে বস্তায়। এমন পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে। তেমনি একজন কৃষক বাহারাম সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২৫শত বস্তায় আদা চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন। ঔষধিগুণ সম্পূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষে স্বপ্ন বুনছেন তিনি। আর তার কাজে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, বাড়ির পিছনে পতিত,অনাবাদি জায়গায় আম বাগানের ছায়া তলে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে আদার গাছগুলো বেড়ে ওঠা শুরু করেছে। হয়তো বছরের শেষ ভাগে আদা সংগ্রহ করতে পারবেন এমনটাই আশা করেছেন তিনি। খাবারে স্বাদ বাড়াতে আদার কোনো জুড়ি নেই। ঔষধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে আদার চাহিদা ব্যাপক। তাই সারা বছর বাজারে ভোক্তার কাছে আদার চাহিদা অনেক বেশি থাকে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর গ্রামের বাহারাম মোড়ে বাড়ির পিছনে পতিত অনাবাদি ছায়াযুক্ত স্থানে সারিবদ্ধভাবে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন কৃষক বাহারাম। ইতিমধ্যে রোপণ করা আদা গাছ গুলো বেড়ে ওঠা শুরু করেছে।

 

আদা চাষী কৃষক বাহারাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, প্রথমে প্রতিটি বস্তায় পলি মাটির সাথে জৈব সার ও রাসায়নিক সার ভাল ভাবে মিশিয়ে বস্তায় ভর্তি করা হয়। পরে বস্তা গুলো সারি বদ্ধ করে রেখে প্রতিটি বস্তায় ২ থেকে তিনটি আদার বীজ রোপণ করা হয়। বস্তার মাটি শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে পানি দিয়ে বস্তা গুলো ভিজিয়ে দেয়া হয়।

 

তিনি আরও বলেন, বস্তায় দেশি ও বিদেশি দুই ধরণের আদার চাষ করা হয়েছে। বস্তায় আদা চাষ তুলনামূলক রোগ বালাই ও খরচ কম। ছায়াযুক্ত হওয়ায় খরার কোন প্রভাব পড়েনা। প্রতি বস্তায় খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এ বছর ওই বস্তাগুলো থেকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ টন আদা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। তাঁর দেখে আশে পাশের অন্য কৃষকেরাও বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় কৃষক এরশাদ আলী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বাহারামের বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ দেখে এলাকায় অনেকেই চাষ শুরু করেছেন। আবার কেউ চাষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বস্তায় আদা চাষ এই এলাকায় নতুন পদ্ধতি। বাহারাম মোড়ে বাহারাম প্রথম এ এলাকায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। তার দেখে অনেকেই এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বস্তায় আদা চাষ একটি আধুনিক পদ্ধতি। যা ফল বাগানে, পতিত জমিতে, বসতবাড়ির আনাচে কানাচে, এমনকি বাড়ির ছাদে চাষ করা যায়। যা প্রচলিত চাষাবাদের চেয়ে ফলন বেশি হয়। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ হলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। দেশের বাজারে আদার চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version