দ্বিতীয় ধাপে তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। রোববার দুপুরে পর্যন্ত লালমনিরহাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয় বলে আবহাওয়া অফিস নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু অনলাইন সাইটগুলো দুপুর একটার পর তাপমাত্রা দেখিয়েছে ৪৫-৪৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে মানুষ অলস সময় পার করছিলেন।
শ্রমজীবী মানুষরা কিছুক্ষণ কাজ করে বার বার বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এবং পানি পান করছিলেন। যাদের টিনসেড ঘর রয়েছে তারা তীব্র গরমে বাড়ির বাইরে গাছের ছায়ায় পরিবারসহ বসে ছিলেন। গাছের ছায়াতেও অনেককে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়! আর শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড়ে রাস্তায় পাশে যাদের দোকান রয়েছে তাদেরকে নিজ উদ্যোগে রাস্তায় পানি দিতেও দেখা গেছে। শহরের কয়েকটি স্কুল দাবদাহের কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়। একটি বেসরকারি স্কুলের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিঁথি রায় বলেন, ‘ গরমের কারণে আমাদের স্কুল একটু তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ক্লাসে অনেক গরম লাগছিল।
দিনমজুর আনোয়ার বলেন, ‘গরমের কারণে স্বাভাবিক সময়ের মতো কাজ করতে পারছিনা। নরমাল সময়ে ১০ থেকে ১২ সিএফটি গিট্টি (ইট) ভাঙতে ও চালনি দিয়ে রাবিস আলাদা করতে পারি। কিন্তু এখন সেখানে ৫ থেকে ৬ সিএফটির বেশি পারিনা’।
জেলার প্রানকেন্দ্র মিশনমোড়ে বিশ্রামরত রিকশাচালক আব্দুস ছামাদ (৬৫) বলেন, ‘বাবা আমার আয় অনেক কমে গেছে। এখন কোনরকমে ৩০০ টাকা মতো আয় হয়। অথচ গরম না থাকলে ৫ থেকে ৬শ টাকা ইনকাম করতে পারি। এখন গরমের কারণে ১ ঘণ্টা কাজ করলে আধাঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয়। এভাবে তাপদাহ থাকলে মাদের সংসার চলবে কীভাবে জানিনা’। পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার চায়ের দোকানের মালিক শাহীন জানান, ‘একমাস আগেও দিনে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আর এখন সেখানে তীব্র তাপদাহে ৫শ টাকাও বিক্রি করতে পারি না। গরমের কারণে লোকজন কম আসে তাই গত ১ মাস থেকে বেচাকেনা খুব খারাপ।
তবে গরমের কারণে ফল ব্যবসায়ী, বেভারেজ ব্যবসায়ী ও এসির শো-রুমগুলোর ব্যবসা ভাল চলছে। তরমুজ বিক্রেতা সজল বলেন, ‘আমি নিজে গরমে কষ্ট পাচ্ছি এটা ঠিক। কিন্তু এখন তরমুজ প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকা হলেও ভাল বিক্রি হচ্ছে। এজন্য আমি খুশী’।
ফল ব্যবসায়ি আফতাব বলেন, ‘অন্যান্য ফলের থেকে এখন কমলা ও মালটা বেশি বিক্রি হচ্ছে। দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেলেও মানুষ কিনছে’।
পেপসিকো কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃক নিযুক্ত সেলসম্যান রেজাউল বলেন, ‘আগে সব পানিয় মিলে প্রতিদিন ১৫০ কেস মাল বিক্রি হতো। এখন দিনে ২০০-২৫০ কেস বিক্রি হচ্ছে’। ওয়ালটন প্লাজার সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ ফিরোজ বলেন, ‘গত একমাসে আমাদের এসির বিক্রি আগের থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে’।
দুপুর ৩ টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর রংপুরের সিনিয়র সাকিব রায়হান বলেন, ‘এখন তাপমাত্রা ৪৩ক্ক সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস’।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া এমন তথ্যের তীব্র সমালোচনা করে রহিম উদ্দিন (৬০)নামে একজন সচেতন নাগরিক বলেন, ‘আমরা গরমে বাঁচিনা আর উনারা গরম কমাচ্ছে। হয় উনাদের মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা উনারা সম্ভবত কম করে বলছেন। আমার মোবাইলেই দেখাচ্ছে প্রায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস’।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য