কক্সবাজারের নয়টি উপজেলার মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়া ছাড়া ৮টি উপজেলা জেলা শহরে সড়ক-–উপসড়কে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ ডাম্পার (ছোট ট্রাক) চলাচল করে। এর বাইরে পিকআপ রয়েছে প্রায় দুই হাজার।এসব ডাম্পার পিক-আপের হেলপার, বালি উত্তোলন ও পাহাড় কাটায় শ্রমিকের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। গত এক বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটতে গিয়ে ৫ রোহিঙ্গাসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব যানবাহনে সরবরাহ হয় পাহাড় কাটার মাটি, ঝিরি–খাল ও নদী থেকে উত্তোলন করা বালু এবং বনাঞ্চলের গাছ।
এতে নদী-খাল, প্রাকৃতিক ঝিরি সংরক্ষিত পাহাড় ও বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। বন বিভাগ ও একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উখিয়া, রামু,ঈদগাঁও, পেকুয়া,মহেশখালী চকরিয়ার অন্তত১২০- ১৩০টি পাহাড় ও ৭৫ টির বেশি প্রাকৃতিক উৎস (নদী, খাল ও ঝিরি) থেকে ডাম্পার ও পিকআপে দৈনিক কয়েক লাখ ঘনফুট মাটি ও বালু পাচার হচ্ছে। বন বিভাগ ও ট্রাফিক পুলিশ অভিযান চালিয়ে একের পর এক ডাম্পার আটকে জরিমানা করলেও পাহাড়নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না।কারণ এসব অবৈধ ডাম্পার বা ছোট ট্রাক চলে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার কেনা মাসিক টোকেন বানিজ্যের মাধ্যমে। বিআরটিএ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ৩ হাজার ৪০০টি ডাম্পার (মিনিট্রাক) রয়েছে, যার আড়াই হাজারের নিবন্ধন নেই। এ ছাড়া দুই হাজার পিকআপের মধ্যে নিবন্ধন নেই অন্তত ৮৫০টির।
রাত ১১টার পর থেকে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের টহল না থাকার সুযোগে ডাম্পার ও পিকআপে পাহাড় কাটার মাটি ও নদীর বালু পাচার হয় বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, দিনেও কিছু ডাম্পারে মাটি পাচার হয়। ডাম্পারসহ অবৈধ যানবাহন জব্দ হলেও জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দিতে হয়। কারণ, জব্দ গাড়ি রাখার জায়গা নেই। এ দিকে অবৈধ ডাম্পারের মালিক উখিয়ার মনসেন বড়ুয়া ও লিংক রোড় কক্সবাজার সদরের জাহাঙ্গীর আলম কথা প্রসঙ্গে বলেন,মাসিক টোকেন বানিজ্যের মাধ্যমে চলে এসব ডাম্পার বা ছোট ট্রাক। লিংক রোড়ে এসে শহরের মহাজের পাড়ার জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যাক্তি টাকা তুলে ঘাটে পৌঁছে দেন।
তারপর পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে কিছু ডাম্পার আটক করেন,পুলিশ ও বনকর্মীরা।মজার ব্যাপার হলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও দেয়া হয়। উখিয়ার মনসেন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ৮ টি মামলা রয়েছে। তারপর ও পাহাড়কাটা বালি উত্তোলন থেকে তিনি সরে আসেননি। গত চার মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বালু ও গাছবোঝাই শতাধিক ডাম্পার ধরে জরিমানা করা হয়েছে জানিয়েছেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার। এসব যানবাহনে রাতের বেলায় চলে পাহাড়নিধন এবং খাল-নদী-ঝিরি থেকে আহরণকৃত বালু পাচারের কাজে। সব অবৈধ ডাম্পার-পিকআপ জব্দ করা গেলে পাহাড়নিধন ও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়ে যেত। তাতে রক্ষা পেত পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এমনটা মনে করেন পরিবেশবাদীরা।
সম্প্রতি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী মোছারখোলা, বরতলী, মধুরছড়া, পালংখালী খালের আগাসহ অন্তত ২৩টি এলাকা ঘুরে পাহাড় কাটার দৃশ্য চোখে পড়েছে। কয়েকটি এলাকায় একসঙ্গে ১০-১২টি ডাম্পারে বালু বোঝাই করতে দেখা গেছে। এসব বালু কক্সবাজার শহরে নেওয়া হচ্ছিল। পাহাড়নিধন ও বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা। পালংখালী ইউনিয়নে শ্রমিকের কাজ করা রোহিঙ্গা রফিকুল আলম (৪৫) বলেন, আশ্রয়শিবির থেকে এসে তাঁরা ৩০ জন রোহিঙ্গা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। দৈনিক মজুরি পান ৩০০ টাকা করে। রোহিঙ্গা মাঝি কামাল তাঁদের নিয়ে এসেছেন। স্থানীয় কারা পাহাড় কাটার কাজে জড়িত, তা তাঁরা জানেন না।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য