-->

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত যুবলীগ নেতা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত যুবলীগ নেতা

আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাঁর থাকার কথা কারাগারে। কিন্তু তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। তিনি আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতা মো. কবির হোসেন সরকার। যুবলীগের পদ পাওয়ার আগে তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মামলা থেকে বাঁচতেই তিনি যুবলীগে ভেড়েন এবং বাগিয়ে নেন একটি থানা কমিটির শীর্ষ পদও।

বিএনপি-জামায়াতের দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি ও ভাঙচুরের অপরাধে ঢাকার রমনা থানায় ২০১১ সালে দায়ের করা মামলাতেই কবির হোসেন সরকারকে আসামি করা হয়। শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আদালত তাঁকে ওই মামলায় দুটি ধারায় প্রতিটিতে পৃথকভাবে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপরও তিনি রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।

তবে কবির হোসেন সরকারের দাবি, তৎকালীন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কিছু বিষয়ে ঝামেলা থাকায় ওই ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্ট না থাকা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রমনা থানার মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলার রায়ের পর তিনি জামিন নিয়েছেন বলে দাবি করেন।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল ঢাকার কাকরাইল এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে সড়কে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, যাত্রীদের মারধরসহ চালকের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রমনা মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর ৩৮ (৯) ১১। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাফর আলী ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আসামির সঙ্গে কবির হোসেন সরকারকেও দোষী সাব্যস্ত করেন। তাঁকে ১৪৭ ধারায় এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৪২৭ ধারায় আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড রায় দেন আদালত। দুটি ধারায় দেওয়া সাজা আলাদাভাবে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়ে দেন আদালত।

রমনা থানার ওই মামলায় আদালতের রায়ের পর কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

তবে আশুলিয়ার স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে কবির হোসেনকে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপনসহ নানা অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নিয়েছেন। এলাকায় তিনি প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রমনা থানার এই মামলা ছাড়াও কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আরও ৫টি মামলা রয়েছে। আশুলিয়া থানায় ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর, ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল, ২০১৪ সালের ২৫ মে, ২০১৩ সালের ২০ জুলাই, ২০০৯ সালের ২১ জুলাই কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এসব মামলায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, চুরি, প্রতারণা, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।

এসব মামলা থেকে রেহাই পেতে কবির হোসেন সরকার যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন বলে জানান অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশুলিয়া যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী দাবি করে বলেন, কবির সরকারকে আগে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তিনি বিএনপির সঙ্গে ওঠাবসা করতেন। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই যুবলীগের আশুলিয়া থানা শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে আহ্বায়কের পদ পান কবির সরকার।

২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের অনেকেই মামলা থেকে রেহাই পেতে কিংবা পুলিশের ধরপাকড় থেকে বাঁচতে ওই সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর মধ্যে কবির হোসেন সরকারের নাম রয়েছে।

এসব ব্যাপারে কবির হোসেন সরকারের বক্তব্য জানতে সম্প্রতি যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘রমনা থানার মামলাটি শেষ করে ফেলেছি। আমি আশুলিয়ার বাসিন্দা, রমনা এলাকার ঘটনায় আমি কেন থাকব। সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমার কিছু ঝামেলা ছিল, উনি ওই মামলায় আমাকে জড়িয়েছেন। ওই মামলার রায়ের পর আমি জামিন নিয়েছি।’ আশুলিয়া থানার বিভিন্ন মামলাতেও আসামি হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি দু-একটি মামলায় জামিনে রয়েছি।’

তবে এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বলেন, কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়েছি। তাঁকে আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

অতীতে বিএনপির রাজনীতি করতেন—এ অভিযোগের বিষয়ে কবির হোসেন সরকার বলেন, ‘আমার দাদা ছিলেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০১১ সালে আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম আমি। এরপর আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক হয়েছি।’

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তরের দায়িত্বে থাকা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল বলেন, ‘কমিটি গঠনের সময় আমরা যাঁদের নেতৃত্ব দিই, তাঁদের বিষয়ে আগেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিস্তারিত জেনে নিই। কবির সরকারের সাজার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জেনে নেব।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version