ঘূর্ণিঝড় রেমালে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় ৫৩ হাজার ১৭১টি ঘের, পুকুর ও কাঁকড়া খামার প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৫১৫টি মৎস্য ঘের, ৮ হাজার ১০০ পুকুর ও ৪ হাজার ৫৫৬টি কাঁকড়া খামার রয়েছে। এতে ৩২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার চিংড়িসহ ৭২২ কোটি ১৭ লাখ টাকার মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চলতি বছর চিংড়িসহ মাছ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার বড় প্রভাব পড়তে পারে রপ্তানিতেও।
মূলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলায় চিংড়ি চাষ হয়। মৎস্য বিভাগের হিসাবে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে খুলনায় ৯ হাজার ১১৫টি, বাগেরহাটে ২৭ হাজার ৫০০টি এবং সাতক্ষীরায় ৩ হাজার ৯০০ ঘের একেবারেই তলিয়ে গেছে। প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩২ কোটি টাকা।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮১টি ইউনিয়নের ৫৩ হাজার ১৭১টি পুকুর, ঘের ও কাঁকড়া খামার। যার আয়তন ৩৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। এতে মোট ক্ষতি হয়েছে ৭২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, এর মধ্যে ১৫ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টান মাছে ক্ষতি ২৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৭ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন চিংড়ি মাছে ক্ষতি ৩২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ১৭১ লাখ পোনায় ক্ষতি ৮৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ১৭২ মে টান কাঁকড়ায় ক্ষতি ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ৫৮০ লাখ পিএলে ক্ষতি ১৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ২০টি নৌকায় ক্ষতি ২০ লাখ টাকা ও অবকাঠামোগত ক্ষতি ৩০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় ১ লাখ ২৫ হাজার টান চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল। রফতানিযোগ্য চিংড়ি রফতানি করে ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা আসে দেশে। সরেজমিনে অনেক জেলের মাছ ধরার চিত্র দেখা গেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা এলাকায়। যা দেখে মনে হচ্ছিল এটি মাছ ধরার কোনও উৎসব। কিন্তু আসলে তা নয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বাঁধ ভেঙে এলাকা ভেসে যাওয়ায় কয়েক’শ ঘের থেকে বেরিয়ে যায় চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ। এটি ছিল কয়েক’শ মাছচাষির মাছ ধরা ও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।
পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আমিনুর সরদার জানান, তার ঘেরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ছিল, যা ঝড়-বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। পাইকগাছার সব ঘের ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে। তিনি এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেম্বার শেখ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোলাদানার এই বিলের সব ঘের পানিতে ভেসে গেছে। ফলে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ ক্ষতি অপূরণীয়। এই যে দেখছেন ব্যাপক লোকজন জাল দিয়ে মাছ ধরছে। ঘের ভেসে যাওয়ায় এখানে স্থানীয় লোকজন মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাইকগাছা উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ঘের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে চিংড়িচাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ অঞ্চলের ৮০ শতাংশ ঘেরই ভেসে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর কোনও ঘেরেই মাছ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এম এ হাসান পান্না বলেন, এমনিতে দেশে মাছের উচ্চ মূল্য, তার ওপর রিমালের কারণে রফতানিযোগ্য চিংড়ির সংকটে বাধাগ্রস্ত হবে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও চিংড়ি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাষিদের তালিকা করে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য