-->
শিরোনাম
জামালপুর-চট্টগ্রাম রেলপথ

নিত্য বিলম্ব চলাচলে যাত্রী দুর্ভোগের নাম বিজয় এক্সপ্রেস

জামালপুর প্রতিনিধি
নিত্য বিলম্ব চলাচলে যাত্রী দুর্ভোগের নাম বিজয় এক্সপ্রেস
প্রতিদিনই সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে ট্রেন

জামালপুর-চট্টগ্রাম রেলপথের বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। গন্তব্যে আসতে ও পৌঁছাতে এত দেরির কারণে যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

সম্প্রতি জামালপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায় অনেক যাত্রী বসে আছেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ট্রেনটির জামালপুর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সেটি পৌঁছায় রাত ১০টায়।

স্টেশনের পথচারী সেতুর সিঁড়িতে বসে ছিলেন রাশেদুল ইসলাম নামের এক যুবক। তিনি বিজয় এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রামে যাবেন। দুই ঘণ্টা আগে স্টেশনে এলেও ট্রেন না আসায় ক্লান্ত হয়ে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে ট্রেনটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করার কথা। অথচ রাত সাড়ে নয়টা অতিক্রম করছে। কিন্তু ট্রেন এখনো জামালপুর স্টেশনেই আসেনি। প্রায় দিনই এভাবেই ট্রেনটি দেরি করে। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক কষ্টের। আসতে দেরি হওয়ার কারণে গন্তব্যেও পৌঁছাবে দেরিতে। আমার মতো সবাই দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।’

জামালপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, বিজয় এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ৮টা ১০ মিনিটে জামালপুর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় ভোর ৫টায়। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে, যা সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে জামালপুর স্টেশনে পৌঁছায়। জামালপুর থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। এই ট্রেনে জামালপুর স্টেশনের যাত্রীদের জন্য ১২৩টি আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৯০টি, এসি চেয়ার ২৫টি, এসি বার্থ ৪টি এবং নন-এসি বার্থ ৪টি। প্রতি মঙ্গলবার ট্রেনটি বন্ধ থাকে।

জামালপুরের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জামালপুর রেলস্টেশন থেকে বিজয় এক্সপ্রেস চলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে জামালপুর-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করছে ট্রেনটি। এর আগে ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করত।

ট্রেনটি জামালপুর স্টেশনে পৌঁছানোর পর কোচ থেকে নামছিলেন নূর নবী নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে। সকালের ট্রেন দুপুর ১২টার দিকে ছেড়েছে। আমার বাড়ি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। এখন রাত ১০টা বাজে। এত রাতে কীভাবে দেওয়ানগঞ্জ যাব? যদি সঠিক সময়ে আসত, তাহলে সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসতাম।’

মেলান্দহ উপজেলা থেকে স্টেশনে এসেছেন ইসমাইল হোসেন নামের এক যুবক। তিনি ওই ট্রেনে চট্টগ্রামে যাবেন। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে ট্রেনটির জন্য অপেক্ষা করছি। প্রায় চার ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি স্টেশনে এল। তার মানে পৌঁছাবেও চার ঘণ্টা বিলম্বে। এতে আমার বড় সমস্যা হবে। ট্রেনটি ভোরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এখন দুপুরে পৌঁছাবে। যে কাজের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছি, এই চার ঘণ্টা বিলম্বের কারণে কাজটি নাও হতে পারে।’

জামালপুর রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) শেখ উজ্জ্বল মাহমুদ বলেন, মাঝেমধ্যে ওই রেলপথে দুর্ঘটনা বা ট্রেনের সূচি বিপর্যয় হয়। তখন আর এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি স্বাভাবিক হয় না। ট্রেনটি সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকে। তখন বিষয়টি স্বাভাবিক হয়। অন্যথায় ট্রেনটি আসতে এবং যেতে তিন ঘণ্টার মতো দেরি হয়। এই সমস্যা প্রায় এক মাস ধরে চলছে।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা, এক জোড়া ট্রেনই যাতায়াত করে। ফলে ট্রেনটি পৌঁছার পর ধোয়া, পরিষ্কার করা ও ইঞ্জিনে তেল ওঠাতে অনেক সময় লাগে। এটা উভয় স্টেশনেই ঘটে। যে কারণে এই সমস্যা লেগেই থাকে। এখানে যদি দুই জোড়া ট্রেন থাকত, তাহলে এই সমস্যা হতো না।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version