-->
শিরোনাম

চাঁদাবাজির জাঁতাকলে অটোচালক, জীবিকা নির্বাহে হিমশিম

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁদাবাজির জাঁতাকলে অটোচালক, জীবিকা নির্বাহে হিমশিম
ক্যাপশন: শিবালয়ের বরংগাইল অটোরিকশা স্ট্যান্ড

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বরংগাইল সিএনজি চালিত ছোট গাড়ি স্ট্যান্ডের অটোরিকশা চালকরা অর্জিত আয় দিয়ে বর্তমান বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমতাবস্থায়, শ্রমিক নেতারা তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করছেন চাঁদা। এটি মরার পর খাঁড়ার ঘা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অটোষ্ট্যাণ্ডের শ্রমিকরা।

সিএনজিচালিত ছোট গাড়ি ও অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা মিশুক, বেবীট্যাক্সি, ট্যাক্সিকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি সম্মিলিতভাবে ঘিওর উপজেলা ঐক্য পরিষদ উপ-কমিটির অনুমোদন প্রদান করেন। অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই উপ-কমিটির নেতারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে চাঁদাবাজি শুরু করেন। অটোরিকশা স্ট্যান্ডের আধিপত্য পুনরুদ্ধার করতে নতুন সাব-কমিটি জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন আর পুরাতন কমিটি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়ে উঠেছে মরিয়া।

পূর্বে এই অটোস্ট্যাণ্ডে কখনো অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা আদায় করা হতো না। কিন্তু নতুন কমিটি এসেই অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করায় পুরাতন কমিটি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ নিয়ে দুই কমিটির মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা ও চাপা ক্ষোভ। এখানে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির কারণে দুপক্ষের মধ্যে ঘটতে পারে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

অটোচালকদের মাধ্যমে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক নেতা বাবুল সরকার, কাজী মতিউর রহমান ও মো.আব্দুল জব্বার কিছু শর্তসাপেক্ষে ঘিওর উপজেলায় ঐক্য পরিষদের একটি উপ-কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। এতে আব্দুল বারেককে সভাপতি এবং সানোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

শর্তে উল্লেখ রয়েছে-কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই জেলা কমিটির অনুমতি লাগবে। কিন্তু এই কমিটি জেলা কমিটির অনুমতি ছাড়াই অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা উত্তোলন করছে। এটি চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।

ছোট গাড়ির চালক নবীন, হাসান, সাইফুল, আতিকুল, আরিফ, হিরুসহ অনেকে বলেন, বর্তমানে তাদের রোজগার আগের চেয়ে অনেক কম। সংসার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য। ঈদে নিজেরা জামাকাপড় না নিলেও বাচ্চাদের দিতেই হয়। এর মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন কমিটির চাঁদাবাজি। শ্রমিক নেতাদের টাকা না দিলে তারা অটোস্ট্যাণ্ড থেকে একজন যাত্রীও নিতে দেয় না। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শ্রমিকরা।

মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, বাস, মিনিবাস, কোচ ও মালিক সমিতির নেতারা যৌথভাবে এখানে ঐক্য পরিষদের একটি উপ-কমিটি দিয়েছেন। এই কমিটি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কোচের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাব-কমিটির অনুমোদন এনে এরা এখানে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি অনতিবিলম্বে লিখিতভাবে জেলা পর্যায়ে প্রেরণ করে এর যথাযথ প্রতিকার চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বরংগাইল হাল্কাযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বড় গাড়ির নেতারা সম্প্রতি একটি সাব-কমিটি দিয়ে অটোরিকশা থেকে শুরু করে সব ছোট গাড়ির ওপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করছে। তারা জোর করে ছোট গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছে। এই কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ।

নতুন সাব-কমিটির সভাপতি আব্দুল বারেক বলেন, প্রথমে অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ২০ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এখন ১০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

এই টাকা নেয়ার বিষয়ে আপনাদের জেলা কমিটি কিংবা পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, চলতি বছরের ২৩ মে কমিটির অনুমোদন পেয়েই তারা কাজ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে এখনো মামিকগঞ্জ জেলা কমিটি কিংবা পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়নি।

জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, অটোরিকশা থেকে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। নতুন সাব-কমিটির নেতৃবর্গ কোনো অটোচালকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন, তবে প্রমাণের ভিত্তিতে ওই কমিটি বাতিল করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ সুকুমার বিশ্বাস ভোরের আকাশকে বলেন, এখান থেকে টাকা উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখার জন্য তদন্ত ওসিকে এখনই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version