-->
শিরোনাম

চার ভাই বোনের রেস্তোরাঁ ‘জুমঘর’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
চার ভাই বোনের রেস্তোরাঁ ‘জুমঘর’
ক্যাপশন: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় অবস্থিত জুমঘর রেস্তোরাঁ

রংবেরঙের ফুলের মাঝখানে বাঁশের তৈরি মাচাংঘর। একপাশে ঝুলছে কাঠের দোলনা, রয়েছে কৃত্রিম ঝরনাও। দেখতে পার্কের মতো মনে হলেও আসলে এটি রেস্তোরাঁ। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কে পুলিন হেডম্যানপাড়া এলাকা থেকে কিছুটা এগোলেই দেখা মিলবে জুমঘর নামের রেস্তোরাঁটির। সুপন চাকমা, স্টালিন চাকমা, দীপিকা চাকমা ও উদয় শংকর চাকমা চার ভাইবোন এই দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁটির উদ্যোক্তা।

 

গত বছরের শুরুর দিকে পাহাড়ের জুমঘরের আদলে তৈরি এই রেস্তোরাঁ চালু করা হয়। বাজার করা থেকে রান্না ও পরিবেশনের সব কাজ চার ভাইবোন মিলেই করেন। চারজনের মধ্যে ছোট বোন দীপিকা চাকমা স্নাতকে পড়ছেন। বাকি তিনজন স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। রান্নাঘরসহ মোট পাঁচটি কক্ষ নিয়ে সাজানো হয়েছে রেস্তোরাঁটি।

 

সুপন চাকমার স্ত্রী হ্যাপি চাকমা এবং স্টালিন চাকমার স্ত্রী কাজলী চাকমাও রেস্তোরাঁর কাজে সহযোগিতা করেন। জুমঘরের প্রধান উদ্যোক্তা সুপন চাকমা বলেন, ‘আমি হস্তশিল্পের কাজ করতাম। সেসব জিনিস কিনতে প্রায় সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন বাড়িতে আসতেন। এসেই ভালো খাবারের খোঁজ করতেন। হঠাৎ মাথায় রেস্তোরাঁ করার কথা এল। বাড়ির সবাই রাজিও হলো শুনে। নিজেদের জমানো টাকা আর কিছু টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে শুরু করলাম রেস্তোরাঁটি। নিজেদের ৫০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত জুমঘর সাজানোর কাজও নিজেরাই করেছি।’

 

জুমঘরের ভেতরে প্রতিটি কোনা সাজানো হয়েছে পাহাড়ের হস্তশিল্প আর হাতে আঁকা ছবি দিয়ে। ভেতরে ঢুকলে প্রথমে চোখ যাবে কাঠ, বাঁশ আর শণের তৈরি পিজোরের (রান্নাঘর) দিকে। সেখানে পাহাড়ি হাঁস, মুরগি, ব্যাম্বো চিকেন, কলাপাতার মাছ কেবাং, ফুজি (জুমের ধনেপাতা) দিয়ে মাছ ভাজা, বাঁশ কোড়লের নানা পদ, পাজন, পাহাড়ি মাশরুমসহ নানা পদের খাবার রসনাবিলাসীদের তৃপ্ত করার অপেক্ষায় রয়েছে। দুপুর ও রাতের খাবারের সঙ্গে আছে নানা পাহাড়ি পিঠা। কলা পিঠা, বরা পিঠা, সান্ন্যে পিঠা, বিন্নি চালের বিভিন্ন পিঠা গরম-গরম পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া নানা রকম ফলের রস, চা, কফি, মোমো, পাস্তা, নুডুলস এসব তো আছেই।

 

স্টালিন চাকমা জানান, তাঁরা বাসি খাবার কখনো বিক্রি করেন না। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী রান্না করে দেন। এ জন্য অবশ্য আধা ঘণ্টা আগে বলতে হয়। জন্মদিন কিংবা অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং নেন তাঁরা। লোকজনের ওপর নির্ভর করে বাঁশ-শণের মাচাংঘর, কাঠের খোলা মাচাংঘর বা বড় মাচাংঘরও বুকিং নিতে পারেন যে কেউ। পাহাড়ি রান্না প্রাধান্য দেওয়া হলেও অর্ডার অনুসারে বাঙালি ও চায়নিজ রান্নাও করা হয়।

 

স্টালিন আরও বলেন, ‘আমাদের রেস্তোরাঁয় দেশি মুরগির মাংস, শাক, ডাল আর পাহাড়ের মিক্স সবজি দিয়ে ৪ জন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে খেতে পারবে। আর পাহাড়ি পিঠার দামও হাতের নাগালেই, ১০ টাকা থেকে শুরু। আমরা মূলত পর্যটকের কথা মাথায় রেখে দামের বিষয়টি চিন্তা করেছি।’

 

দীঘিনালা থেকে আক্তার হোসেন জুমঘরে খেতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এখানকার পাহাড়ি খাবারের স্বাদ আর ভিন্ন পরিবেশ মুগ্ধ করে তাঁকে। দামও হাতের নাগালেই। বিশেষ করে মাটির তৈরি জিনিসপত্রে তাঁদের পরিবেশনা অসাধারণ বলে জানান তিনি।চার ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র বোন দীপিকা চাকমা। তিনি বলেন, ‘জুমঘর আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিঃসন্দেহে। তবে খাবার, পরিবেশ, পরিবেশনা সবকিছুর মধ্যে পাহাড়কে তুলে ধরতে চাই আমরা। নিজেদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version