-->
শিরোনাম

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্কের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে

প্লট বরাদ্দের প্রস্তুতি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্কের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে
ক্যাপশন: প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের প্রস্তুতি চলছে

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক চলতি বছরের মধ্যে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের বর্তমান নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এ শিল্প পার্কটি নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের শিল্প ও অর্থনৈতিক দিকে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিল্প পার্কটি চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প পার্কটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই শিল্পপার্কটি চালু হলে এ অঞ্চলের প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে অনেক বেকার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা চাকরি পাওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলে শিল্প ও অর্থনীতির চাকা সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য শিল্পায়ন অপরিহার্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশের প্রেক্ষাপটে বিসিক শিল্পপার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে পরীক্ষামূলক খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তারা।

 

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী, পশ্চিম মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলটিয়া ও মোরগ্রাম মৌজার অংশ নিয়ে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বিসিক শিল্পপার্কটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট একনেক সভায় বিসিক শিল্পপার্ক প্রকল্পের মূল ডিপিপি অনুমোদন পায়।

 

২০১৫ সালের মে মাসে জমি অধিগ্রহণ শেষ করে জমির পজিশন বুঝে পায়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে মাটি ভরাট কার্যক্রম শুরু হয়। তৃতীয় সংশোধিত প্রকল্প ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালের পিডব্লিউডি রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

 

আরও জানা যায়, পার্কের ৮২৯টি প্লটে অন্তত ৫৭০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা রয়েছে। ক্ষুদ্র, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্লট বরাদ্দের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে রপ্তানি ও আমদানিমুখী শিল্প প্লট অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এ ছাড়া একটি সবুজ বৃত্ত ও হ্রদ ১০ একরের বেশি জায়গাজুড়ে বিদ্যামান থাকবে, যা পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহয়তা করবে এবং স্থানীয় পরিবেশকে রক্ষা করবে।

 

এ ছাড়া পার্ক এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক জোন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, আবাসিক কোয়ার্টার, রেস্টুরেন্ট, মার্কেট স্থাপনসহ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার ও জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রমিক আব্দুল লতিফ বলেন, এখানে নদী ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এ অঞ্চলে এখন বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এখানে অনেক বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এলাকার অনেক বেকার যুবকরা কাজ পাবে ও মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

 

এ বিষয়ে বিসিক শিল্পপার্কের আরাফাত কনস্ট্রাকশনের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মফিজুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, সড়ক, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণে দিন-রাত মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করছেন। সড়ক ও ড্রেনের কিছু অংশের কাজ বাকি আছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপর এখানে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।

 

বিসিক শিল্পপার্কের রোডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার ইমাম হোসেন সোহান ভোরের আকাশকে বলেন, সবচেয়ে বড় বিসিক শিল্পপার্ক গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জে। নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। খুব তাড়াতাড়ি এখানে মিল-কারখানা গড়ে উঠবে, যা এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটবে।

 

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়েজিদ ভোরের আকাশকে বলেন, অনেক বাধা সত্ত্বেও আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। আমরা সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করার আশা করছি। এ ছাড়া প্লট বরাদ্দের লক্ষ্যে আমরা দরপত্র আমন্ত্রণ (বিজ্ঞপ্তি) প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

 

তিনি আরও বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই উদ্বোধন করা হবে শিল্পপার্কটি। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্কটি উদ্বোধন করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ভোরের আকাশকে বলেন, সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কটি এমন স্থানে অবস্থিত, যেখান থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে সুব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারবেন। এরই মধ্যে পার্কের অবকাঠামোগত কাজ প্রায় শেষ। আমরা আশা করছি আমাদের স্বপ্নের শিল্পপার্কটি যেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version