খুলনার কয়রা উপজেলায় দিন দিন ক্রমেই বাড়ছে অপমৃত্যুর সংখ্যা। তুচ্ছ ঘটনা, প্রেম, খুন, আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, বজ্রপাত, বিদ্যুৎস্পর্শ ও পারিবারিক কলহের কারণে লাশের সারি দিন দিন লম্বা হচ্ছে। বিগত ১৫ মাসে কয়রা থানায় এ ধরনের ঘটনায় ৫৩টি অপমৃত্যু হয়েছে। এর আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যা দ্বিগুণ।
২০২২ সালে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয় ২৬টি। গত ১৫ মাসে ৫৩টি অপমৃত্যুর মধ্যে ফাঁস দিয়ে ২৩, বিষপানে ১১, পানিতে ডুবে ৯, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটে তিন, বজ্রপাতে এক, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই, অন্যান্য ঘটনায় চারজন। কয়রা থানার পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাঁস দিয়ে কিংবা বিষপানে আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু, মাটি বা পাহাড়চাপা পড়ে মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে মৃত্যু, দুর্ঘটনায় অথবা সন্দেহজনক মৃত্যু হলে থানায় অপমৃত্যু হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
অপমৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়াদের বেশির ভাগেরই জীবনে ছিল না কোনো শিক্ষার আলো। এর সঙ্গে রয়েছে পারিবারিক অসচ্ছলতাও। একদিকে সচেতনতার অভাব, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এসব পরিবারে রয়েছে নানা অশান্তি। ফলে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে এসব পরিবারের সদস্যরা।
আবার কম বয়সী নারীদের মধ্যে অতি আবেগের কারণেও ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা।
এ বিষয়ে কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সব মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে অপমৃত্যু আরো বেশি দুঃখজনক। তবে সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, ধর্মীয় অনুশাসনসহ নৈতিকতা বৃদ্ধি বিষয়ে সবাই সচেতন হলে অপমৃত্যু রোধ করা সম্ভব।’
কয়রা শুভসংঘের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম বলেন, ‘শিক্ষার অভাব, আবেগ প্রবণতা, বাল্যবিবাহ, অর্থনৈতিক দৈন্যসহ নানা কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েদের কর্মমুখী করে তোলা এবং পুরুষদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব।’
কয়রা থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মৃত্যু বা খুনের প্রকৃত কারণ আপাতত নির্ণয় করা সম্ভব না হলে অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে আদালতে পাঠায়। আদালত সব কিছু দেখে যথাযথ নির্দেশ দেন। প্রতিটি আত্মহত্যার পরেই ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন।
কয়রা ইউএনও বি এম তারিক উজ-জামান বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক নানা প্রোগ্রাম করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এর কুফল নিয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর বাল্যবিবাহ নিরোধেও চলছে কার্যক্রম।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য