-->
শিরোনাম

সরকারি কোয়াটার সংস্কার কাজে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
সরকারি কোয়াটার সংস্কার কাজে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট
ক্যাপশন: রামগতি উপজেলা পরিষদের সরকারি কোয়াটার (মেঘনা ভবন)

লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা পরিষদের সরকারি কোয়াটার (মেঘনা ভবন) সংস্কার কাজে ভয়াবহ দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজ সম্পন্ন না করেই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। অথচ এখনো সম্পূর্ণ কাজ বাকি রয়েছে। এ যেন পুকুর চুরির মত ঘটনা ঘটিয়েছে মিঠু ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর সাথে জড়িত রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা এবং ইউএনও।

 

সুত্র জানিয়েছেন, কাজের শুরু থেকেই ছিল নানা অনিয়ম। কার্যকর মনিটরিং ও জবাবদিহি না থাকায় কর্তাব্যক্তির নাকের ডগায় সংস্কারের নামে রীতিমতো ডাকাতি কারবার করা হয়। প্রাপ্ত অভিযোগ ও সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে যার বেশকিছু প্রমাণও মিলেছে। এ বিষয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাজ না করেই বিল উত্তোলন কিভাবে সম্ভব, এ বিষয় জানতে গিয়ে দায়িত্বশীলদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন। কাজ পাওয়া ঠিকাদার বলছেন এখনো তিনি কোন বিল পাননি। আর উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন যতটুকু কাজ করছেন ততটুকুর বিল তিনি দিয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা বলছেন ইতিমধ্যে ২৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার মিঠু। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হলে সরেজমিনে তদন্তে যান এ প্রতিবেদক।

 

তদন্তে গিয়ে দেখা যায়, রামগতি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়টি পুরাতন হওয়ায় এটি উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সংস্কার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এতে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাজের ধরণ হিসেবে ধরা হয়। টাইলস, দরজা, জানালা ও রঙ। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা গেছে, সামান্য কিছু টাইলস বসানো হয়েছে। এখনো কোন দরজা জানালা লাগানো হয়নি। বাহিরের অংশে সবেমাত্র ঘষামাজা করা হয়েছে। এতেই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বিল তুলে নেন ঠিকাদার।

 

৩০ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ১০শতাংশ লেস ও আয়কর বাদ দিয়ে ২৭ লাখ টাকা মুল্য নির্ধারণ করে টেন্ডার আহবান করা হয়। চলতি বছরের মার্চের শুরুতে কাজটির ওয়ার্কঅর্ডার পান মেসার্স মিঠু টেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ভবনটির টাইলস, দরজা জানালা ও রঙ করা কথা থাকলে বাস্তবে এগুলো করা হয়নি। নামে মাত্র ভবনের বাহিরে সামান্য ঘষামাজা (পলিস) করেই ২৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম।

 

সবচেয়ে ভয়াবহ অনিয়ম হলো এখনো কাজ শেষ হয়নি। অথচ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি অফিস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে ২৩ লাখ টাকার মত ছাড় দিয়েছেন। বাকি টাকাও ছাড় দেওয়ার প্রসেসিং সম্পন্ন করা হয়। প্রকল্পের জন্য টানানো হয়নি তথ্যবোর্ড।

 

মিঠু টেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মিঠু বলেন, শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষের পথে, তবে আমি এখনো কোন বিল পাইনি। তবে প্রকৃত কাজের অবস্থা সম্পার্কে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। কাজের তদারকিতে থাকা উপ-প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুধু রঙের কাজ নয়। এখানে টাইলসসহ অন্যান্য সংস্কার কাজ করার কথা। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে নেই। যতটুকু কাজ করেছেন, ততটুকু কাজের বিল দিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, কাজের পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন উপজেলা প্রকৌশল অদিধপ্তর। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version