-->
শিরোনাম

জয়পুরহাটে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ

লাম্পি স্কিন ডিজিজে পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে। জয়পুরহাটে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের (এলএসডি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের খামার ও গৃহস্থের গরুতে দেখা দিয়েছে এ রোগ। গ্রাম্য পশু চিকিৎসকদের দাবি, গত তিন মাসে অন্তত দেড় হাজারের বেশি গরু মারা গেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গৃহস্থ ও খামারিরা।

পাঁচটি উপজেলার একাধিক গ্রাম্য পশু চিকিৎসক, গৃহস্থ ও খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর একই সময়ে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দিয়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে আবারও এ রোগে গরু আক্রান্ত হতে শুরু করে। এখন প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গরুর লাম্পি স্কিন ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রাম্য চিকিৎসকরা প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আক্রান্ত গরুর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গৃহস্থ ও খামারিরা আক্রান্ত গরুকে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এদিকে মারা যাওয়া বেশিরভাগই বিদেশি জাতের বাছুর।

প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে প্রতিষেধক হিসেবে আক্রান্ত গরুকে ছাগলের পক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এতে তেমন একটা কাজ করছে না বলে জানান খামারিরা। তবে বাজারে গরুর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহের কম অজুহাতে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।

‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ কী?: মূলত এটি একটি পক্স ভাইরাস বা লাম্পিং স্কিন ডিজিজ ভাইরাসজনিত রোগ। ভাইরাসটি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ঈধঢ়ৎরঢ়ড়ী ারৎঁং গণের ভাইরাস। ছাগল ও ভেড়ার পক্স ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের খুবই সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এ ভাইরাস গরু ছাড়া মহিষেও ছড়াতে পারে। এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।

এলএসডি আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সাথে সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের কোথাও কোথাও ফুলে যায়।

বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বাছুর গরু আক্কেলপুর পৌর শহরের খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার খামারে দুই মাস বয়সী বিদেশি জাতের একটি বাছুর গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানানোর পর খামারে এসে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এখনো গরুর শরীরের ঘা শুকায়নি। গরুর বাছুরের পা ফুলেছে। গতবছর এ রোগে আমার বিদেশি জাতের একটি বাছুর মারা যায়। জয়পুরহাট সদর উপজেলা ভাদশা গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে দুটি বাছুর গরু রয়েছে। দুটি গরুই লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়েছিল। এরমধ্যে একটি মারা গেছে।

পাঁচবিবির রতনপুর গ্রামে শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবড় মিলে নয়টি গরু পালন করি। সব গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। অনেকটা সুস্থ হচ্ছে গরু। দেশে শিগগির গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগের টিকা উৎপাদন শুরু হবে।

তিলকপুর এলাকার গ্রাম্য পশু চিকিৎসক আবু হাসান বলেন, প্রতিটি গ্রামে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। গত তিন মাসে জেলা জুড়ে দেড় হাজারের বেশি গরু মারা গেছে।

পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নিয়াজ কাজমীর বলেন, প্রতিদিনই লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত গরু ও গরুর বাছুর আসছে। এসব আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার পাশাপাশি গরুর মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে। লাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরু মারাও যাচ্ছে।

আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, সঠিক চিকিৎসায় আক্রান্ত গরু ভালো হচ্ছে। তবে হাতুড়ি চিকিৎসকদের উল্টাপাল্টা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে গরু। এ বিষয়ে গৃহস্থ ও খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মহির উদ্দিন বলেন, গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। চিকিৎসায় ২৫-২৮ দিনের মধ্যে সুস্থ হচ্ছে গরু। তবে ভুল চিকিৎসায় কিছু গরু মারা যাচ্ছে।

জয়পুরহাট আঞ্চলিক প্রাণিরোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। এই রোগ হওয়ার আগেই গরুকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। আক্রান্তের পর ভ্যাকসিন দিলে তা ভালো হতে অনেক সময় লাগবে। তখন গরু খেতে পারে না। এতে গরু দুর্বল হয়ে মারা যায়।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version