-->
শিরোনাম

সংস্কারের অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৫টি লোহার সেতু

বরগুনা প্রতিনিধি
সংস্কারের অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৫টি লোহার সেতু
ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে

নির্মাণের পর দীর্ঘ ৭ বছরেও সংস্কার না করায় বরগুনায় ২৪৫টি লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিকল্প পথ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতু পার হচ্ছে যানবাহন ও স্থানীয় অধিবাসীরা। এতে ঘটছে দুর্ঘটনাও। সম্প্রতি আমতলীতে সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের ঘটনায় টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফুট ওভারব্রিজ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি বরগুনা সদর উপজেলার ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে ২০০২ সালে নায়েব বাড়ি সেতু নির্মাণ করে। এই দুই ওয়ার্ডের একমাত্র সংযোগ সেতুটি বিগত ৭ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। ভাঙা অংশে কোন রকম সুপারি গাছের গুড়ি দিয়ে সাঁকো বানিয়ে পার হচ্ছেন এলাকাবাসী। বিগত ২২ বছরে কোন রকমের সংস্কার বা বিকল্প পথের ব্যবস্থা করেনি কোন কর্তৃপক্ষ। একই প্রকল্পের আওতায় ২০০৮ সালে বরগুনার আমতলী উপজেলায় আউয়াল নগর সেতুটি নির্মাণ করে। এরপর গত ১৬ বছরে একবারের জন্যও সংস্কার করা হয়নি সেতুটি। এ কারণে সেতুটির একপাশ ডেবে যাওয়ার পাশাপাশি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে লোহার অ্যাঙ্গেল। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে লোহার খুঁটিও।

যানবাহন তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ হাঁটলেও ঝাঁকুনি দেয় সেতুটিতে। তারপরও বিকল্প পথ না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই সেতু পার হচ্ছে যানবাহন। এমন অবস্থা বরগুনায় দুই শতাধিক লোহার সেতুর। এসব সেতুর অধিকাংশতে নেই ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। সেতু ভেঙে গেলে সেটার আর খোঁজই নেন না কর্তৃপক্ষ। এতে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। গত দুই বছরে জেলায় ৭টি সেতু ধসে মারা গেছেন ৯জন। তারপরও সেতু সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের জন্য টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।

বরগুনা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা জেলার ৬ উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতু শনাক্ত করা হয়েছে। আমতলী উপজেলায় ৯৯টি, তালতলী উপজেলায় ২৮টি, বরগুনা সদর উপজেলায় ৬১টি, বামনা উপজেলায় ২৫টি, বেতাগী উপজেলায় ১৬টি ও পাথরঘাটা উপজেলায় ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বরগুনা সদর উপজেলা আয়লা পাতাকাটার ইউনিয়নের অটোরিকশা চালক মো. হিরন মিয়া বলেন, ‘মোগো দুঃখ কেউ দ্যাখবে না। গত পাঁচ বচ্ছর ধইর‌্যা মোরা কষ্ট হরি, কেউ মোগো দিকে চায় না। মোরা একটা গার্ডার সেতু চাই।’

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তৎকালীন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী যতগুলো লোহার সেতু নির্মাণ করেছেন, তার অধিকাংশই ভেঙে গেছে। ওই সেতুগুলোতে রেলপাটির বীম দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা দেয়নি। তারা উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজশে দায়সাড়াভাবে সেতু নির্মাণ করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তা ভেঙে গেছে। অনুসন্ধান করে এ সেতুগুলো ভেঙে যাওয়ার কারণ চিহ্নিতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বামনা উপজেলার শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর বীম ভেঙে গেছে। পাটাতন উঠে গেছে। সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলতে পারে না। ইস্কুল কলেজে শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়। আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হচ্ছি। ৫-৭ বছরের ভিতরে কিভাবে সেতু ভেঙে যায়। তদন্ত করে সেতু নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বরগুনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, এ পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ২৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করা হয়েছে। এখনো এ সংখ্যা বাড়তে পারে। এগুলোর মধ্যে কতগুলো সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ সেটা নির্ণয় করে বাজেট আকারে মন্ত্রালয়ে পাঠানো হবে। এরপর বরাদ্দ পেলে ঝূঁকিপূর্ণ সেতু সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version