নড়িয়া-জাজিরা সড়কের কীর্তিনাশা নদীতে সাত বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি সেতুর। দুই দফায় ঠিকাদার পরিবর্তন করে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলায় ৬ মাস ধরে ওই সড়কে চলাচলকারিদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হতে হচ্ছে।
শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়া উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে কীর্তিনাশা নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পূর্ব তীরে উপজেলা সদর ও পশ্চিম তীরে মোক্তারের চর, রাজনগর, নশাসন ও জপসা ইউনিয়ন। এছাড়া জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন রয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা সদরের সাথে সড়ক পথে ওই ইউনিয়নগুলেতে ও জাজিরায় যোগাযেগোর জন্য ১৯৯৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর ওপর ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। সেতুটির নাম রাখা হয় ‘ভাষা সৈনিক গোলামা মাওলা সেতু’। ২০১০ সাল হতে কয়েক বছর সেতুটির আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদী ভাঙনের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরে। ২০১৫ সালে সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করে এলজিইডি। ওই সময় হতে সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এর পর ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি।
২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৫ মিটার সেতু নির্মাণ করার জন্য নাভানা কন্সট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে কয়েক মাস পর তা বন্ধ করে দেয়। ২০১৯ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ ফেলে প্রতিষ্ঠানটি চলে যায়। তখন ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়।
এরপর ২০২১ সালে পুনরায় দরপত্র দেওয়া হয়। এ দফায় সেতুটির সাথে ভায়াডাক যুক্ত করে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়। ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৫ মিটার সেতু ও ২২২ মিটার ভায়াডাক নির্মাণ কাজ পায় কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে কার্যাদশে পায়। ৯ জুন প্রতিষ্ঠানটির কাজের মেয়াদ শেষ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে।
নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে জাজিরা হয়ে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র সড়ক পথ এটি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ পথে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কীর্তিনাশা নদী দিয়ে কোন যানবাহন পারাপার হতে পারছে না। নড়িয়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষকে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঢাকায় যাতায়াত করতে হলে জেলা শহরের প্রেমতলা হয়ে অন্তত ১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলতে হচ্ছে।
নতুন সেতু নির্মাণ করার কারণে পুরাতন সেতুটি গত বছর ডিসেম্বর মাসে ভেঙে ফেলতে হয়েছে। ওই পথে চলাচলকারি যাত্রীদের পারাপার করার জন্য এলজিইডি দুটি ট্রলার দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে আরো দুটি ট্রলার দিয়ে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে। নড়িয়া উপজেলা সদরে কলেজ, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নদী পারাপার হয়ে আসতে হচ্ছে।
নড়িয়ার রাজনগর এলাকার লিয়াকত হোসেন বলেন, আমি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। প্রতিদিন তিনি ৫-৬ বার উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। পুরাতন সেতুটি দিয়ে আমার মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত করতাম। নতুন সেতু নির্মাণ না করেই পুরাতন সেতুটি ভেঙে ফেলায় আমরা দুর্ভোগে পরেছি। প্রতিদিন নৌকায় করে পারাপার হতে আমাদের ভয় লাগে। নিরুপায় হয়েই তা করতে হচ্ছে।
নড়িয়া কলেজের ছাত্র মোক্তারের চর এলাকার বাসিন্দা হৃদয় হোসেন বলেন, কলেজের ক্লাশ ও টিউশন মিলে দিনে ৬-৭ বার উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে হয়। ৬ মাস ধরে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছি। এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে নদীতে আরো স্রোত বেরে যাবে তখন আমাদের আরও কষ্ট হবে।
কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সেতুর নির্মাণ কাজটি করছেন আব্দুল ওয়াহাব মাদবর নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, নদীতে সমস্যার কারণে পাইল বসাতে সময় বেশি লেগেছে। ৯ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হবে। আমরা মেয়াদ বারানোর চিঠি দেব। এখন যে গতিতে কাজ চলছে, এ গতিতে চললে আরো এক বছর লাগবে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে।
এ ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রাফেউল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে যে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছিল তারা কাজটি শেষ না করে চলে যায়। এলজিইডি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন যে ঠিকাদার কাজ করছে তারাও ধীরগতিতে করছে। তাদের তৎপর হওয়ার জন্য তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। আর মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ ও ঝুঁকি কমানোর জন্য বিকল্প একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। পায়ে হাটার ওই সেতুটি নির্মানণহলে মানুষের নদী পারাপারে দুর্ভোগ কমবে।
নড়িয়া কীর্তিনাশা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নড়িয়া-জাজিরা-ঢাকা সড়কের কীর্তিনাশা নদীতে সেতু নির্মাণ কাজ চলছে ধীর গতিতে। কোন শ্রমিককে সেখানে কাজ করতে দেখা যায়নি। নদীর পূর্ব পারে ভায়াডাকের কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। আর পশ্চিম তীর ও নদীতে ৮টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। নদীতে থাকা ভাষা সৈনিক গোলামা মাওলা সেতুটি (পুরাতন) ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই পথে চলাচলকারিরা নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। ৪টি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় (ট্রলার) করে যাত্রীদের পারাপার করা হয়। নদীর দুই তীরে যানবাহন ডাকে। ট্রলারে পারাপার হওয়ার পর মানুষ ওই যানবাহনে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য