দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চাকশ্রী-গিলেতলা সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দ, বড় বড় গর্তে পানি জমে যাওয়ার সঙ্গে অনেক জায়গায় ১ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত কাঁদা রয়েছে সড়কটিতে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও স্থানীয়রা। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। জনভোগান্তি কমাতে অতিদ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে গিলেতলা থেকে বাগেরহাট, খুলনা, মোংলা, ফয়লাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন স্থানীয়রা। এদিকে খানপুর, চাকশ্রী ও বাইনতলা এলাকার একটি বড় অংশ এই সড়ক দিয়ে রামপাল, মোংলা, ফয়লা, ভাগাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ও কয়েক হাজার যানবাহন চলে এই সড়কে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাকশ্রী থেকে গিলেতলা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘের এই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে। সড়কের উপরের পিচ উঠে অনেক জায়গায় জমেছে ১ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত কাঁদা। সড়কের পাশ ও মাঝখানে চাকশ্রী এ বি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে, একুববারিয়া, বাইনতলা নেছারিয়া আলিয়া মাদরাসাসহ অন্তত ১৩টি স্থান দেবে গেছে। এসব জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও স্থানীয়রা।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক মো. রাজু বলেন, রাস্তার যে বেহাল দশা, তাতে চলাচল করা খুবই কষ্ট। কয়েক দিনে দুইবার আমার ইজিবাইক উল্টে গেছে। তারপরও গাড়ি নিয়ে বের হতে হয়, গাড়ি না চালালে খাব কি।
চাকশ্রী এ বি সি ম্যাধমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু হানিফ বলে, দুই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না ভাঙা রাস্তার জন্য। বৃষ্টির সময় কয়েকবার গর্তের মধ্যে পড়ে গেছি। গর্তে পড়ে আমার বন্ধুরাও আহত হয়েছে।
বাসচালক ওমর ফারুক বলেন, চাকশ্রী থেকে গিলাতলা মাত্র সাড়ে ৫ কিলোমিটার পথ যেতে স্বাভাবিকভাবে ২০ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু খানাখন্দ ও ভাঙাচোরার কারণে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হয়। আমাদের গাড়িরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করা পথচারী ও গাড়িচালকেরা জানান, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সড়কের পিচ উঠে গিয়ে স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না গাড়িগুলো। শিগগিরই সড়ক মেরামত করা না হলে এ সড়ক ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আলম শেখ নামের এক বৃদ্ধ বলেন, চারদিকে এত উন্নয়ন, তবুও আমাদের এই সড়কটি ভালো হয় না। ২-৩ বছর ধরে রাস্তাটির খারাপ অবস্থা। মানুষজন অসুস্থ হলে হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। আর কবে ভালো হবে এই রাস্তা বলেই আক্ষেপ করেন বৃদ্ধ আলম শেখ।
রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটির বেহাল দশা। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নিজের পকেটের টাকা দিয়ে খানাখন্দে ইটের আদলা দিয়েছি, কিন্তু এখন আর দেওয়ার মতো জায়গা নেই। সব জায়গায় খারাপ অবস্থা। এখনই যদি এই সড়ক সংস্কার না করা হয়, তাহলে রাস্তা দিয়ে আর মানুষ যাতায়াত করতে পারবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপাল উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলজার হোসেন বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির ৩ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। অবশিষ্টাংশের কাজ আগামী অর্থবছরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভোরের আকশ/সু/মি
মন্তব্য